পেঁয়াজের মতো মাস্ক-হ্যান্ডওয়াশের দাম যেন না বাড়ে : হাইকোর্ট
করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। এ সময় হা্ইকোর্ট বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু একে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের মতো মাস্ক, স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াশসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যাতে বাড়াতে না পারে। কালোবাজারি ঠেকাতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আজ সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
আদালত বলেন, ‘আইইডিসিআরের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রেস ব্রিফিং করেন। উনার বক্তব্য আরো পজিটিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। উনি সারা পৃথিবীর কথা বলেন। মনে হয়, আমাদের দেশেও ধেয়ে আসছে। এটা যেন কোনোভাবে মানুষর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে।’
আদালত আরো বলেন, ‘মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন। মানুষের কাছে মোবাইল ফোন আছে। মানুষের কাছে সব খবর যায়। এগুলো উনাদের দরকার নেই। উনারা কী করছেন, মানুষ কীভাবে সচেতন হবে এবং কী করা দরকার- সে বিষয়গুলো মানুষকে জানানো দরকার। আর সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা জানানো দরকার।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার শুনানির শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আমিনুল হাসানের দেওয়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এরপর অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেন, ‘করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। একে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের মতো মাস্ক, স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াশসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যাতে বাড়াতে না পারে এবং কালোবাজারি ঠেকাতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ সময় আদালতে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এটার ব্যাপকতা যে কত তা সরকারও অনুভব করেছে। কিছু স্টেপ ওনারা নিয়েছে। মাস্ক নিয়ে বলব। ১০ টাকার মাস্ক ১২০ টাকা নিচ্ছে। এটা নিয়ে একটা ডিরেকশন দেন।’
মওদুদ আরো বলেন, ‘সরকার ইচ্ছে করলে ফ্রি দিতে পারে।’ তখন আদালত বলেন, ‘১০ বা ১৬ কোটি দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। একটা হতে পারে, যারা কোনো রকমভাবে সন্দেহের মধ্যে বা আক্রান্ত হয় বা হাসপাতালে যায় তাদের ব্যবস্থা করা যায় কি না, এটা হয়তো বাস্তব।’
এরপর মওদুদ আহমদ বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের পোশাকের বিষয়টি দেখতে হবে। এটা সরকারের স্টকে কত আছে।
তখন আদালত বলেন, প্রতিবেদনে বলা আছে, রোগ প্রতিরোধী পোশাক পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে।
গণমাধ্যমে সচেতনতা প্রচারের বিষয়ে আদালত বলেন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এমনভাবে সচেতনতামূলক প্রচার করতে হবে যেন মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।
দেশের মানুষ বিদেশে যাওয়া এবং দেশের নাগরিকসহ বিদেশিদের দেশে আগমণের বিষয়ে আদালত বলেন, আমাদের দেশের অনেকে বিদেশি থাকেন। শ্রমিকরা বিভিন্ন দেশে যায়। তাদের সার্টিফিকেট দেওয়ার দরকার হলে যেন সমস্যা না হয়। সেটি খেয়াল রাখতে হবে। আর যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদের ক্ষেত্রেও সার্টিফিকেট আছে কি না সেটা দেখতে হবে, এয়ারপোর্টগুলোতে।
এর আগে গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছিলেন আদালত। আজ সোমবার তা প্রতিবেদন আকারে জমা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আজ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা শনাক্তকরণে বিমানবন্দরে দুটি থার্মাল স্ক্যানার সচল আছে, দুটি বিকল আর নতুন করে চারটি আনার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে আলাদা ইউনিট ও বেসরকারি হাসপাতালে সেল গঠনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, পর্যাপ্ত কিট রয়েছে। দেশের সব বন্দরে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে।
সবকিছু শুনে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এত দিন চলে গেলেও করোনা প্রতিরোধে নেওয়া পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়, এমনকি এখানে অবহেলা রয়েছে। পরে আদালত কয়েকটি মৌখিক নির্দেশনা দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যা এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ২০ শয্যা বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে এবং একটি মনিটরিং সেলও গঠন করা হয়েছে।
আদালত বলেন, বিষয়টি নজরে রাখলাম। আগামী ৫ এপ্রিল পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হলো। এর আগে, সোমবারের মধ্যে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চান হাইকোর্ট।
সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর গত ৫ মার্চ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দেন।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে- এ মর্মে প্রকাশিত সংবাদ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী আদালতের নজরে নিয়ে এলে উচ্চ আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
এগুলো হলো- এক. স্থলবন্দর, নৌবন্দর, বিমানবন্দর, বিশেষ করে বিমানবন্দরে যখন বিদেশিরা বাংলাদেশে আগমন করছেন, তখন অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে তাদের কী ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন তারা প্রশিক্ষিত কি না এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কি না, তা জানাতে বলেছেন।
দুই. সারা বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলো এখন পর্যন্ত প্রাক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয় নাই। আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সব বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনাভাইরাসের জন্য প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা (পৃথক কেবিনসহ চিকিৎসকের সরঞ্জাম) গ্রহণ করতে হবে।
তিন. প্রত্যেকটি হাসপাতালে বা বন্দরগুলোতে যেখানে শনাক্তের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে সেখানে সরঞ্জামগুলো পর্যাপ্ত রয়েছে কি না, যদি না থাকে জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দেন। এ আদেশ অনুসারে প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।