‘পেটে অনেক ক্ষুধা, কেউ খোঁজ নেয় না’

Looks like you've blocked notifications!

করোনাভাইরাসের কারণে সরকার দেশের সব ধরনের অফিস-আদালত বন্ধ করে দিয়েছে। রাজধানীর সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চলাচল, নেই কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলার সেই চিত্রও। দিনমজুর মানুষ ঘরে-রাস্তায় বসে দিন পার করছে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে এসব মানুষ।

আজ রোববার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে একটি বস্তিতে ছোট ছোট খুঁপড়িতে প্রায় ২০০ মানুষের বসবাস। এখানকার অনেক নারী বাসাবাড়িতে কাজ করে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীদের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে বাড়িওয়ালারা। আবার কেউ কেউ ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে এসব মানুষ। একইরকম বিপদে পড়েছে রিকশাচালকরাও, তাদের আয়-উপার্জন হঠাৎ করেই অনেক কমে গেছে।

দুপুরে হনুফা আক্তার নামের এক নারী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এক সাহেবের বাসায় কাজ করি। কিন্তু করোনার কারণে আমাকে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন। এখন বাসায় খুব কষ্টে আছি।’

বিন্দু নামের ৮০ বছরের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘বাবা আমি ভিক্ষা করি। গত কয়েকদিন বাসা থেইক্যা বের হতে পারি না। পেটে অনেক ক্ষুধা। কেউ খোঁজ নেয় না। আমাগোরে কেউ দেখার নাই।’  

একই ভাষায় কথা বলেন বিন্দুর প্রতিবেশী লাইলি (৫৫), রুমা (৩৫), শাহনাজ (৬০) ও বকুলি বেগম (৫৬)।

শাহনাজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাবা আমি ভিক্ষা করি। এহন পুলিশ রাস্তায় বাইর হতে দেয় না। রাস্তায় মানুষও নাই। অনেক কষ্টে আছি। খাওয়া নাই।’

বকুলি বেগম বলেন, ‘আমি রাস্তায় বোতল টোকাই। এখন রাস্তায় যাইতে পারি না। বাসায় খাবার নাই। খুব কষ্টে আছি।’

রওশন আলী নামের এক রিকশাওয়ালা বলেন, ‘ভাই, আমি গ্যারেজের রিকশা চালাই। কয়েকদিন ধরে রিকশা বন্ধ। হাতে টাকা-পয়সা নাই। বাসায় খাওন নাই। তিনটা পোলা-মাইয়ারে লইয়া অনেক কষ্টে আছি। আমাগো কেউ কোনো খবর নেয় না। কেউ কোনো খাওনও দেয় না।’

এভাবে রাজধানীর কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, পল্টন, গুলিস্তানসহ আরো কিছু এলাকার ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সময়ে করোনাভাইরাসের কারণে তাদের একদিকে যেমন রাতে থাকার সমস্যা হচ্ছে, আরেকদিকে আয়-রোজগার না থাকায় খাবারের সমস্যাও দেখা দিয়েছে।

গুলিস্তানের ফুটপাতে বসে থাকা রমজান আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জায়গা নেই, খাবারের ব্যবস্থাও নেই। আগে সারা দিন কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে যা পাইতাম, তাই দিয়ে ডাল-ভাত খাইতাম। রাতে স্টেডিয়াম বা আশপাশের মার্কেটে যেখানে পারতাম ঘুমাইতাম। কারো কাছ থেকে কিছু চেয়ে খাবো, সেই অবস্থাও নাই। কার কাছে চাইব, সবকিছুই তো বন্ধ, লোকজন তো নাই। কোনো জায়গায় বসে থাকতেও পারি না, পুলিশে পিটায়।’

একই এলাকায় আলী আজম নামের আরেক ছিন্নমূল বলেন, ‘কী ভাইরাস আইল, আমাগো শান্তি হারাম কইরা দিছে এই ভাইরাস। খাইতে পারি না, ঘুমাইতে পারি না। মানুষ তো ভয়ে বাড়ি থেকে বাইর হয় না। আমরা কই যামু কন, আমাদের তো কিছুই নাই। মরি আর বাঁচি আমাগো এই রাস্তাতেই থাকতে হইবো।’