পেমেন্ট ব্যাক করার অ্যাবিলিটি ইভ্যালির নেই : টিপু মুনশি

মাত্র ১০-১৫টি খারাপ প্রতিষ্ঠানের জন্য পুরো ই-কমার্স খাত বন্ধ করে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে পৃথক নিবন্ধন নিতে হবে। ই-কমার্স নিয়ে আজ বুধবার সচিবালয়ে চার মন্ত্রণালয়, ই-কমার্স খাতের নেতৃবৃন্দ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব কথা জানান মন্ত্রী।
প্রযুক্তির দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে দেশ। সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়েছে ব্যবসার ধরন। আর প্রযুক্তির হাত ধরে ব্যবসাও পেয়েছে ভিন্ন আঙ্গিক ও মাত্রা। সম্প্রতি অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সঙ্গে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা সারা দেশে আলোচনার ঝড় তোলে। ই-কমার্স নিয়ে নড়েচড়ে বসে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও।
বুধবার সচিবালয়ে ই-কমার্স নিয়ে চার মন্ত্রণালয়, ই-কমার্স খাতের নেতৃবৃন্দ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ খাতকে বন্ধ করা যাবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘দায় এড়াতে চাচ্ছি না বলেই তো এ সভাগুলো করছি আমরা। দায় নিয়েই চাচ্ছি যে কিভাবে—একটা ঘটে গেছে বলেই যে সব নষ্ট হয়ে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে, তা কিন্তু না। আমরা দায় নিচ্ছি যে আগামী দিনগুলোতে, আমরা হাজার হাজার, লক্ষাধিক লোক এখন ই-কমার্সের ওপর বেঁচে আছে। তাদের তো আমরা ডুবাতে পারি না। সেজন্য দায় নিয়েই আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে সরানো যায়।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ই-কমার্স তো বন্ধ করা যাবে না। এটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটারই তো ধারাবাহিকতা এটা। কিন্তু এদেরকে চলতে দিতে হবে। এদেরকে চালাতে হবে। এরা যেন গ্যারান্টেড ব্যবসার মধ্যে থাকতে পারে, সেজন্য নীতি নির্ধারণ করতে হবে।’
টিপু মুনশি আরও বলেন, ‘ইভ্যালি বলেন বা যুবক বলেন বা যারাই বলেন, তারা যে পেমেন্ট ব্যাক করবে, তাদের তো সেই অ্যাবিলিটিটাই নেই এখন।’

ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন, ডিজিটাল ই-কমার্স আইন প্রণয়ন, সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে পৃথক নিবন্ধন নেওয়া, প্রতারকদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে বিচার করাসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা আসছে বলে জানান মন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, ‘নিবন্ধন নিতে হবে। আমরা কন্টিনিউয়াস ফলোআপ করব একটা কমিটি করে দিয়ে যে কোথাও এমন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কি না। ভোক্তা অধিকারকেও আমরা কাজে লাগাব যে অন্তত প্রচারের জন্য। যে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা, কোনটার দিকে মানুষের আকৃষ্ট হওয়া উচিত নয়, এমন কিছু করে আমরা চেষ্টা করব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আগামীতে যেন কখনো মানুষ আর চিটেড না হয় একদিক, দ্বিতীয়ত যেটা ঘটেছে সেটা পুরোপুরি তদন্ত করে কতটুকু কমপেনসেট তারা করতে পারে, কতটুকু তাদের কাছে আছে সম্পদ, সেটাকে নিয়ে এসে মানুষের দায়টা কতটুকু মেটানো যায় তা চিন্তা করা হচ্ছে।’
এখন আর প্রতারণা করে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত থেকে মতামত দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ই-কমার্সে অনেক মানুষ প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আছে। ই-কমার্স পরিচালনার জন্য একটি আইন তৈরি করা প্রয়োজন। দেশের কোনো মানুষ যাতে ডিজিটাল বাণিজ্যে প্রতারিত না হন, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এজন্য একটি প্লাটফর্ম গঠন করা দরকার।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষ যাতে প্রতারিত না হন, সেজন্য আইন করা দরকার। এ ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা যেতে পারে। গুটিকয়েক প্রতারণাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ই-কমার্স বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে প্রতারণার সুযোগ কমে আসবে। রেগুলেটরি অথরিটিকে অত্যাধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে এবং মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ই-কমার্স বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না। আইনের আওতায় এনে ই-কমার্সকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। যাতে করে কেউ প্রতারণা করতে না পারে। মানুষ কম দামে পণ্য পেতে চাইবে, এটাই বাস্তবতা। ই-ব্যবসার জন্য জামানত রাখার ব্যবস্থা করা যায়। ব্যবসা যত বড় হবে জামানত তত বেশি হবে। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। মানুষকে প্রতারণার বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। মানুষ যাতে টাকা ফেরত পায় সেজন্য সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রীনা পারভীন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হকসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কমকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।