পৌর কবরস্থানে শায়িত শহীদ ওমর ফারুকের মা
পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ ওমর ফারুকের মা কুলসুম বেগম (৯৮) আর নেই। বার্ধক্যজনিত কারণে পিরোজপুরে নিজ বাসভাবনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত সোমবার দিনগত রাত ২টার দিকে মারা যান তিনি। পরদিন মঙ্গলবার জোহরের পর জানাজা শেষে তাঁকে শহরের পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে শহীদ হন ওমর ফারুক। কিন্তু, সে খবর বিশ্বাস করেননি মা কুলসুম বেগম। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে রাতে দরজা খোলা রেখে ভাতের থালা নিয়ে অপেক্ষা করতেন ছেলের জন্য। ‘সেই অপেক্ষার যেন শেষ হলো’ বললেন শহীদ ওমর ফারুকের বোন কুলসুম বেগমের মেয়ে জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সালমা রহমান হ্যাপি।
হ্যাপি তাঁর মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
জানা গেছে, কুলসুম বেগমকে নিয়ে ‘ওমর ফারুকের মা’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি শুরু হয়। সরকারি অর্থায়নে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন এম জাহিদুর রহমান বিপ্লব। এর চিত্রনাট্য করেন মাসুম রেজা।
ইতিহাস থেকে নেওয়া ওই গল্পে একাত্তরে ২১ বছরের তরুণ ছিলেন ওমর ফারুক। ছিলেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি। যুদ্ধের সময় এক রাতে মাকে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন, রাতে ফিরে মায়ের হাতে ভাত খাবেন। ওমর ফারুকের আর ফেরা হয়নি। সে রাতে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাঁর কাছে বাংলাদেশের সাতটি পতাকা পায় পাকিস্তানি সেনারা।
হানাদার বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয় ফারুকের। হাতুড়িপেটা করে একটি পতাকা ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাঁর মাথায়। শহীদ ওমর ফারুকের লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় কীর্তনখোলার জলে।
এরপর থেকে প্রতি রাতেই ভাতের থালা হাতে ছেলে ফেরার অপেক্ষায় থাকতেন শহীদ ফারুকের মা কুলসুম। সোমবার রাতে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন।