প্রশাসনের সহায়তায় নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাল স্কুলছাত্রী
ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রশাসনের সহায়তায় এক স্কুলছাত্রী নিজেই তার বাল্যবিবাহ ঠেকাল। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে তাকে তার মা-বাবা মারধর করে বাড়িতে আটকে রাখেন।
আজ শুক্রবার বিকেলে প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথা ছিল তার। সে উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
বন্দি অবস্থা থেকে ওই স্কুলছাত্রী কৌশলে আজ সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক বান্ধবীর বাড়িতে চলে যায়। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সহযোগিতায় নলছিটি উপজেলা প্রশাসন ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে।
পরে ওই স্কুলছাত্রীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবে না মর্মে মা-বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নেয় উপজেলা প্রশাসন এবং তাকে তাঁদের জিম্মায় দিয়ে দেয় ।
স্কুলছাত্রীর অভিযোগ, বাড়ির পাশের সৌদি প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে তার অমতে বিয়ে ঠিক করেন তার মা-বাবা। এতে রাজি না হওয়ায় তাকে গতকাল রাতে মারধর করে এবং বাড়িতে আটকে রেখে বিয়েতে রাজি করার চেষ্টা করেন তাঁরা। পরে কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে সে এক বান্ধবীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে খবর পাঠায় সে। এরপর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পুলিশের সহযোগিতায় ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হলে তাকে কোথাও বিয়ে দেওয়া হবে না বলে মুচলেকা নেন তাঁরা।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মেয়েটির বিয়ের বয়স হয়নি। তাকে তাঁর মা-বাবা জোর করে প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছেন। মেয়েটি ভয়ে বাড়ি থেকে পালায়। পরে আমাকে ফোনে সে বিস্তারিত জানায়। আমি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে জানাই। পরে উপজেলা প্রশাসন পুলিশ নিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।’
ওই স্কুলছাত্রীর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ও কেবল নবম শ্রেণিতে পড়ে। ওকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায়। আমি মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়েছি। তাকে পূর্ণ বয়স না হওয়া পর্যন্ত যেন বিয়ে দেওয়া না হয়, এ ব্যাপারে নজর রাখব।’
নলছিটি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুর রহমান বলেন, ‘ওই স্কুলছাত্রী তাঁর এক বান্ধবীর বাসায় পালিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে ফোন করে। পুলিশ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে তাকে উদ্ধার করে। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে তার মা-বাবার জিম্মায় দেয়। মুচলেকায় ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিয়ে দিতে নিষেধ করা হয়। এর পরও যদি তাঁরা তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’