ফিটনেসবিহীন মোটরযান বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত, বিপাকে হিলি বন্দরের ট্রাকমালিকরা

Looks like you've blocked notifications!
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে সারি করে রাখা ট্রাকচালক। ছবি : এনটিভি

আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নবায়ন করা না হলে ফিটনেসবিহীন মোটর পরিবহন বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ। এতে বিপাকে পড়েছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের ট্রাক পরিবহন মালিকরা।

তারা বলছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এমনতিই ভাড়া হচ্ছে না। তার ওপর বিআরটিএর এমন সিদ্ধান্ত ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। তাই নবায়নের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে তারা।

হিলি স্থলবন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসায়িক সংগঠন ও ট্রাক পরিবহন সংগঠনের সূত্রগুলো বলছে, ১৯৮৭ সাল থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালু রয়েছে। এজন্য এখানে গড়ে উঠেছে ট্রাক পরিবহন ব্যবসা। ফলে এখান থেকে স্থানীয় দুই শতাধিক ট্রাকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শত শত ট্রাক আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আসা-যাওয়া করছে। এতে এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বিআরটিএ বলছে, ১০ বছরের অধিক সময় ধরে চলাচল করা এসব ফিটনেসবিহীন ট্রাক, বাসসহ সব ধরনের মোটরযান আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নবায়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নবায়ন করা না হলে ১ জুলাই থেকে অভিযান চালিয়ে সেসব মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে।

স্থানীয় ট্রাক পরিবহন ব্যবসায় সম্পৃক্ত শ্যামল দাস বলেন, 'আমরা কিস্তির মাধ্যমে ট্রাক কিনে ভাড়া খাটাচ্ছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে হিলি বন্দরে আমদানি রপ্তানি দীর্ঘ আড়াই মাস বন্ধ ছিল। গত ৮ জুন থেকে সীমিত পরিসরে চালু হলেও এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। আমরা ধার দেনা করে কিস্তি দিচ্ছি। এখন বিআরটিএর থেকে ফিটনেস নবায়নে খুব কম সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাই সরকারের উচিত হবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নবায়নের সময় বৃদ্ধি করে দেওয়া।'

হিলি স্থলবন্দর ট্রাক মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক হযরত আলী সরদার বলেন, 'দীর্ঘ সময় ট্রাকগুলো পড়েছিল। করোনার কারণে কোনো ভাড়া হয়নি। ফলে অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা চালক ও হেলপারদের বেতন দিয়ে যাচ্ছি।'

এ রকম পরিস্থিতিতে বিআরটিএর এমন সিদ্ধান্ত ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মনে করেন তিনি।

বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছে, 'বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ সময় না বাড়িয়ে যদি অভিযান শুরু করে তাহলে স্থলন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমনিতেই ব্যবসায়ীরা করোনার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।'

কয়েকজন ট্রাকচালক জানান, ফিটনেস নবায়ন নেই এমন অনেক চালক ট্রাক চালাচ্ছে। আবার কেউ কাজ হারিয়ে বসে আছে। ১ জুলাই থেকে বিআরটিএর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে আমরা শত শত চালক ও হেলপার বেকার হয়ে যাব। পরিবার নিয়ে আমাদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে।

হিলি স্থলবন্দর ট্রাকমালিক গ্রুপের সভাপতি শেখ আব্দুল সাফি বলেন, 'করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা চলছে। এ কারণে তেমন ট্রাক ভাড়া হচ্ছে না। অনেক ট্রাক মালিক ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না। তারা আর্থিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে বিআরটিএর ফিটনেস নবায়নে খুব কম সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ফিটনেস নবায়ন করা সম্ভব হবে না। আমরা চাই সময় বাড়ানো হোক। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হোক।'