ফ্লাইওভারগুলো এখন মরণফাঁদ

Looks like you've blocked notifications!

রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলো হয়ে উঠেছে মরণফাঁদ। এগুলো এখন ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য। দিন-রাত সমানতালে এসব ফ্লাইওভারে চলছে অভিনব কায়দায় ছিনতাই। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের কাছে এসব ফ্লাইওভার হয়ে উঠেছে আতঙ্কের নাম।

জানা যায়, ঢাকার ফ্লাইওভারগুলোর মধ্যে বিশেষ করে খিলগাঁও, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী, মগবাজার-মৌচাক, কুড়িল ফ্লাইওভারে প্রায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার শিকার হন নগরবাসী। বিশেষ করে এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত মোটরবাইকচালকদের থেকে বাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ফ্লাইওভারের ওপর নাইলনের সুতা বেঁধে রাখে। যা মোটরসাইকেলচালকের সহজে চোখে পড়ে না। কোনো বাইকার বাইক নিয়ে যাওয়ার পথে সুতার ফাঁদে আটকে বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যান। আর এ সুযোগেই দুর্বৃত্তরা বাইক ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। অনেক সময় বাইক চালককে ছুরি দিয়ে আহত করে।

এ ছাড়া একই ঘটনা ঘটে রাজধানীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনস্পট হাতিরঝিলেও। সেখানেও রাতের বেলা ও নির্জন সময়ে দুর্বৃত্তরা রাস্তার ওপর নাইলনের ধারালো সুতা বেঁধে রাখে। যাতে আটকে সহজেই দুর্ঘটনার শিকার হন বাইকাররা। এ বিষয় রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকলেও দুর্বৃত্তদের তৎপরতা থেমে নেই। এমনকি হাতিরঝিল এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নতুন একটা পুলিশিং থানা শুরু করে সরকার।

ফ্লাইওভারে ঘটে যাওয়া এসব বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের কথা হয় ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, রাতের বেলা, ছুটির দিন অথবা নির্জন সময়গুলোতে ফ্লাইওভারে চলাচল করতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এ সময়গুলোতে ফ্লাইওভার যেন একটা মরণ ফাঁদ!

মোহাম্মদ হোসাইন তারেক নামের একজন সংবাদকর্মী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মিন্টু রোড-কারওয়ানবাজার অংশের কারওয়ানবাজার এলাকার দিকে মোড় নিতেই আমার গলা, হাত ও বাইকের গ্লাসের সঙ্গে নাইলনের সুতো আটকে যায়। সুতোয় জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমার বাঁ হাতের বাহু কেটে যায়। তখন বুঝতে পারি আমি দুর্বৃত্তের দেওয়া মরণ ফাঁদে আটকে গেছি। একটু এদিক সেদিক হলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হতাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন।’

তারেক বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে বাইক থামিয়ে দেখি পানির মতো দেখতে এক ধরনের সুতো আমার শরীর ও বাইকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। যা মোটেও খালি চোঁখে দেখা যায় না। ভর দুপুর বেলায় এমন ভয়ানক পরিস্থিতির মুখে পড়ব সেটা ভাবতেই পারিনি। তবে এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি নিজেদেরও সচেতন হতে হবে।’

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইমাম উদ্দিন নামের এক বাইকার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি কিছুদিনে আগে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের রাজারবাগ-বাংলামোটর অংশে এমন দুর্ঘটনার মুখে পড়ছিলাম। রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজারবাগ থেকে বাংলামোটর যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের সুতোর ফাঁদে আটকে যাই। আমার গলার মধ্যে নাইলনের সুতো আটকে যায়। শীতকাল হওয়ায় গলায় মাফলার জড়ানো ছিল। আর বাইকের গতিও কম ছিল। না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’

ইমাম উদ্দিন আরো বলেন, ‘যেভাবে সুতোগুলো রাখা হয় তা কোনোভাবেই খালি চোখে দেখা যায় না। এমনকি যখন আমি এই সুতোয় জড়িয়ে যাই তখনও বুঝতে পারিনি আমি কোনো ফাঁদে জড়িয়ে গেছি। পরে যখন আমি বাইক থেকে পড়ে যাই তখন বুঝতে পারলাম আমি ফাঁদে পড়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ ঘটনা অতীতেও ঘটেছে, এখনও মাঝেমধ্যে ঘটছে এটি অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু সব সময় আমরা চেষ্টা করছি যাতে কোনো নগরবাসী এমন বিপদের মুখে না পড়ে। এছাড়া নিয়মিত আমাদের টহল পুলিশ হাতিরঝিল লেক, এ ছাড়া ফ্লাইওভারের ওপরেও টহল দেয়। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার কেউ না হয়।’

মহিউদ্দিন আরো বলেন, ‘মাঝে করোনার কারণে কিছুটা শিথিলতা ছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে আবারো টহল জোরদার করা হয়েছে। আজকে থেকে যাতে টহল আরো বেশি করা হয় সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিব। একই সঙ্গে নগরবাসীকে বলব আপনারাও একটু সতর্ক থাকুন। সচেতনভাবে বাইক চালান যাতে এসব দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা যায়। পুলিশ সব সময় চেষ্টা করছে এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার। এছাড়া এভাবে সড়ক ও ফ্লাইওভারে সুতো বেঁধে ফাঁদ তৈরি করে ছিনতাই করার জন্য বেশ কিছু অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’