বগুড়ায় শিক্ষকের ছোড়া কলমের আঘাতে দৃষ্টি হারাল দুই শিক্ষার্থী
বগুড়ার শাজাহানপুরের মালীপাড়া গ্রামীণ একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকের ছোড়া কলমের আঘাতে দুই শিশু শিক্ষার্থী দৃষ্টি হারিয়েছে। ওই দুই শিক্ষার্থী হলো উপজেলার মালীপাড়া গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম (৯) ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে সোহান (১৩)।
এ বিষয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের চাপে বিচার চাওয়ার সাহস পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবার।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শাহ আলম ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং সোহান সপ্তম শ্রেণির। এ ছাড়া দুজনই ওই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন কোচিং করত।
শাহ আলমের মা-বাবা জানান, গত ১৪ জানুয়ারি শাহ আলম কোচিং করার সময় লিখতে ভুল করায় ও দুষ্টুমি করার অপরাধে শিক্ষিকা রীমা খাতুন তাঁর হাতের কলমটি ছুড়ে মারেন এবং সেটি শাহ আলমের চোখে লাগে। এ সময় সে কান্নাকাটি শুরু করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন এবং বিষয়টি মা-বাবাকে বলতে নিষেধ করেন।
কিন্তু চোখের ব্যথা বেশি হওয়ায় শাহ আলম আবারও কান্নাকাটি শুরু করলে বাড়ির আশপাশের সহপাঠীরা তার মা-বাবাকে বিষয়টি জানায়। পরদিন ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা লুৎফা জাহান ও পরিচালক আবু সাঈদ বাদশা বিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষার্থে শাহ আলমের মা-বাবাকে চুপ থাকতে বলেন এবং চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
কিন্তু চোখের চিকিৎসায় খরচ বেশি হবে জানার পর পরদিনই চিকিৎসককে বলে ছাড়পত্র নেওয়া হয়।
এভাবে মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর শাহ আলমের মা-বাবা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হলে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে অস্বীকার করেন বিদ্যালয়ের পরিচালক আবু সাঈদ বাদশা ও প্রধান শিক্ষক লুৎফা জাহান।
পরে বাধ্য হয়ে বগুড়ায় চক্ষু চিকিৎসকের কাছে গেলে শাহ আলমের চোখ আর ঠিক হবে না বলে পরিবারকে জানিয়ে দেন চিকিৎসক।
শিশু শাহ আলম বলে, ‘আমি লিখতে ভুল করায় ম্যাডাম আমার দিকে কলম ছুড়ে মেরে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে চোখ দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এর পর থেকে আর চোখ দিয়ে দেখতে পারছি না।’
একই অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের আরেক শিশু শিক্ষার্থী সোহানের মা আনজুয়ারা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কলমের আঘাতে তাঁর ছেলে সোহানের এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। অনেকদিন চিকিৎসা করেও ভালো হয়নি। সোহান চোখে ঠিকমতো দেখতে না পারায় তাকে স্থানীয় একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়েছে।
এভাবেই শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতায় একে একে দৃষ্টি হারিয়েছে দুই শিশু শিক্ষার্থী। স্কুল কমিটির লোকজনের চাপে এখন অভিযোগ করতেও সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী ওই দুই শিশুর অভিভাবক। এর ফলে ব্যবস্থা নিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাই জবাবদিহিও করতে হয়নি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটিকে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গ্রামীণ একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক আবু সাঈদ বাদশা ও প্রধান শিক্ষিকা লুৎফা জাহান বলেন, ‘এসব তো পুরোনো কথা। নতুন করে বলার কী আছে। তা ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বলে এসবের দায় প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না।’
শাজাহানপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিক আজিজ বলেন, ‘বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসের কাছে দায়বদ্ধ নয়। তাই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া এ বিষয়ে জানানো হয়নি। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ওই শিক্ষককে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা জরুরি।’
একই মন্তব্য করেছেন শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা পারভিন।