বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহ উদ্দিনকে নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় দুটি গণমাধ্যম। যদিও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ এ বিষয়ে এখনো কিছুই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সূত্র এনটিভি অনলাইনকে জানায়, ভারতে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনকে আটক করা হয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন। আটক ব্যক্তি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন কি না, তা শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
সংবাদভিত্তিক ভারতের টিভি চ্যানেল এনডিটিভির গতকাল মঙ্গলবারের এক খবরে বলা হয়, সীমান্তের কোনো একটি স্থলবন্দর দিয়ে গত সোমবার তাঁকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদই রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানান।
তবে ঢাকায় পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বিষয়টি ‘জানা নেই‘ বলে এড়িয়ে যান।
অবশ্য নাম না প্রকাশের শর্তে সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য সরাসরি অস্বীকার করেনি। ওই সূত্র এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো অপেক্ষা করতে বলেছে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনকে গত সোমবার সন্ধ্যায় একটি স্থলসীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা অভিযানটি পরিচালনা করায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সে সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেনি। এতে আরো বলা হয়, এর আগে মোসলেহ উদ্দিনের ছবি এবং ভিডিও প্রকাশিত হলে তাতে কিছু বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ওই ছবি প্রকাশের পর বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছিল, মোসলেহ উদ্দিন কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
এদিকে গতকাল ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়, সম্ভবত মোসলেহ উদ্দিনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ অপেক্ষায় রয়েছে।
এর আগে গত সোমবার ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, ভারতের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় মোসলেহ উদ্দিনকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় একটি গ্রাম থেকে আটক করা হয়।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফাঁসির আগেই গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেহ উদ্দিন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান। এরপর গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়লে তিনি নিখোঁজ হন। উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর রেলস্টেশন এলাকায় অপরিচিত কিছু ব্যক্তির সঙ্গে তাকে সর্বশেষ দেখা যায়।
জানা যায়, দীর্ঘদিন মোসলেহ উদ্দিন গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। এই এলাকায় ‘ডাক্তার দত্ত‘ নামে পরিচিত ছিলেন এবং ‘ইউনানী ফার্মেসি‘ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসা করতেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেদিন দেশে না থাকায় বেঁচে যান বড় মেয়ে শেখ হাসিনা এবং ছোট মেয়ে শেখ রেহেনা।
গত ৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে মিরপুর এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে ১১ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এর আগে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।