বরিশালে পরিবহণ শ্রমিকদের অবরোধ, ২১ রুটে বাস বন্ধ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুই পরিবহণ শ্রমিককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তাঁদের মুক্তির দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ রুটে বাস চলাচল বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরের রুপাতলী বাস টার্মিনালের সামনে সুরভী চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন পরিবহণ শ্রমিকেরা। এ সময় তাঁরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এতে বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি রুটে যাত্রী পরিবহণ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন রুপাতলী মিনিবাস শ্রমিক ইউনিলয়নের নির্বাহী সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক।
বরিশাল পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলায় আমাদের দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনো লোক ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়নি। আমরাও তাদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছি।’
বিক্ষোভরত এক শ্রমিক বলেন, ‘তাদের (শিক্ষার্থীদের) কেউই কিছু করেনি। শিক্ষার্থীদের ঝামেলা হয়েছে বিআরটিসির স্টাফদের সঙ্গে। আমাদের শ্রমিকদের যদি না ছাড়া হয়, তাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলবে। বরিশালের রুপাতলী থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করছেন। আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এদিকে, শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করার পর হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাঁরা হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
ববি শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা ও সন্ত্রাস একসঙ্গে হতে পারে না। সহপাঠীদের ওপর হামলার ঘটনায় আসামিদের নাম দিয়ে মামলা ও নামধারীদের গ্রেপ্তার না করা হলে আন্দোলন চলবে।
উভয় পক্ষের অবরোধের কারণে আজ শনিবার সকালে ভোগান্তিতে পড়েছেন বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটাগামী যাত্রীরা। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে রনি ও ফিরোজ নামের দুই পরিবহণ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এঁরা জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তাঁরা অবগত নন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের তিন দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন এবং দাবি পূরণ হলেই তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন বলে জানান।
গত মঙ্গলবার দুপুরে রুপাতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে। এরপর রাতে রুপাতলী হাউজিং এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে পরিবহণ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। এতে ১১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার প্রতিবাদ এবং এ ঘটনায় মামলা করাসহ হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এর ১০ ঘণ্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করার পর সেই মামলা প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় গতকাল শুক্রবার সড়ক অবরোধ এবং মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ফের ১৩ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তাঁরা।