বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি, সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করলেন হাইকোর্ট
বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় বইটি লেখা ও প্রকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেছেন, ‘প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি করে তারা যে অপরাধ করেছিল, পরে ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক ও আপ্রাণ প্রচেষ্টার কারণে তাদের অপরাধ ম্লান হয়ে গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মইনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু গণমাধ্যমকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়। তখন থেকেই মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল।
বইটি নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা কমিটি নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর বইটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় দেখা গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর এর বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। এর মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি—এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বইটিতে তদানীন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং যা সবার ভুল বলে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বইটির সম্পাদককে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।’