করোনা রোধে লকডাউন

বাইরে বেরিয়ে রাতভর হাজতবাস, মামলার পর জরিমানাও

Looks like you've blocked notifications!
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ঘর থেকে অকারণে বের হওয়ায় অনেককেই গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফাইল ছবি : এনটিভি

‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ প্রথমদিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেপ্তার ৬১৭ ব্যক্তিকে বিভিন্ন অংকের জরিমানা করেছেন আদালত। সে জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে থাকতে হবে কারাগারে।

আজ শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী ও শহিদুল ইসলামের দুই আদালত এই আদেশ দেন।  

ঢাকার ৯ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী জনি খন্দকার এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে ২৩৮ জনকে ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের আদালতে ৩৭৯ জনকে হাজির করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাতে তারা থানাহাজতে ছিলেন।   

জনি খন্দকার আরও বলেন, গ্রেপ্তার ৬১৭ জনকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেন। এ ছাড়া জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের কারাগারে পাঠানো হবে এবং একদিনের জন্য সেখানে থাকতে হবে বিচারক আদেশে বলেছেন। অপরদিকে জরিমানার টাকা পরিশোধ করলে আজই আদালতের হাজতখানা থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। 

গতকাল দিনভর অভিযানে  লকডাউনে সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ মানাতে রাজধানীজুড়ে দিনভর চেকপোস্ট, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও টহল পরিচালনা করা হয়। সারা দিনে বিনা কারণে ঘর থেকে বের হয়ে পুলিশের হাতে গ্রপ্তার হয় অনেকে। এ ছাড়া বিধিনিষেধ অমান্যের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আরও ২১২ জনকে জরিমানা করা হয়।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠপ্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে এ ব্যাপারে ২১ দফা বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে এবং শিল্প কারখানা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। উন্মুক্ত স্থানে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাঁচা বাজার ও নিত্যপণ্য কেনাবেচা করা যাবে।

এ ছাড়া শপিংমল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধের পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে বিধিনিষেধ কার্যকরে সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

২১ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে-

১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।

২. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যাচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরণের সামাজিক (বিবাহোত্তর ওয়ালিমা অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৬. বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি।

৮. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।

৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/কার্গো ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত।

১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

১৫. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকঅ্যাওয়ে) করতে পারবে।

১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট দেখিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।

১৭. স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিডিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

১৯. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সে সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।