বাবার কবরে চিরনিদ্রায় ড. আনিসুজ্জামান
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের মরদেহ রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে বাবার কবরে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন ধানমণ্ডি রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম ।
বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন ড. আনিসুজ্জামানের ছোট ভাই মো. আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে আমার ভাইকে সিএমএইচ থেকে আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়। এখানেই তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। তারপর বাবার কবরে তাঁকে দাফন করা হয়।’
আক্তারুজ্জামান আরো বলেন, ‘সকাল ১০টার একটু আগে ড. আনিসুজ্জামানকে সিএমএইচ থেকে একটি লাশবাহী গাড়িতে তোলা হয়। তার আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর লাশটি ক্লিনিং করা হয়। সর্বশেষ কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে লাশটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ড. আনিসুজ্জামান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছিলেন তাঁর ছোট ভাই আক্তারুজ্জামান।
ড. আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। গত ২৭ এপ্রিল হার্ট, কিডনিসহ বেশ কিছু রোগ নিয়ে তিনি মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা সিএমএইচে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানেই তিনি মারা যান।
আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা এ টি এম মোয়াজ্জেম ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। মা সৈয়দা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। আনিসুজ্জামানরা ছিলেন পাঁচ ভাইবোন। তিন বোনের ছোট আনিসুজ্জামান, তারপর আরেকটি ভাই। পরে পরিবারটি ঢাকায় চলে আসে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে ড. আনিসুজ্জামানের। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাঁকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ ছাড়া একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ড. আনিসুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে ভারত সরকার তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করে।
এ ছাড়া অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে দুবার আনন্দবাজার পত্রিকার দেওয়া আনন্দ পুরস্কার, ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
আনিসুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে—মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৪), মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৯), মুনীর চৌধুরী (১৯৭৫), স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬), আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩), মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৮৩), পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪), মোতাহার হোসেন চৌধুরী (১৯৮৮), আমার একাত্তর (১৯৯৭), মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮) এবং আমার চোখে (১৯৯৯)।