বিএনপির আইনজীবীরা অবৈধ চাপ সৃষ্টি করেছেন : অ্যাটর্নি জেনারেল

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হট্টগোল ও এজলাসকক্ষে অবস্থান নিলে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। ছবি : এনটিভি

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে অবৈধ চাপ সৃষ্টি করে বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাব। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের উত্তর হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আজকে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত স্বাস্থ্যগত রিপোর্ট চেয়েছিল। মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বলেছে, নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। এ জন্য সময় প্রয়োজন। এ সময় আদালত এক সপ্তাহ সময় দিয়ে ১২ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির আইনজীবীরা চরম হট্টগোল, গণ্ডগোল শুরু করেন। তাঁরা যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে সুপ্রিম কোর্টে, আমরা আইনজীবীরা এ ধরনের আদালত অবমাননাকর কার্য‌ক্রম দেখিনি। তারা বাইরের আন্দোলনকে এজলাসের ভেতরে নিয়ে এসেছে। আদালতের ওপর অবৈধ চাপ সৃষ্টি করছে। আদালতের কার্য‌ক্রম চালাতে দেয়নি।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা শুরু করলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সব বিচারপতি এজলাসকক্ষ ত্যাগ করেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচার কার্য‌ক্রম বন্ধ রয়েছে। এ বিশৃঙ্খলার জন্য আদালত এজলাস ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ জন্য আমি প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাব, তিনি যেন এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেন।’

এ সময় ব্যারিস্টার ও ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘একটি দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির জামিনের জন্য আদালতে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আইনজীবীরা এর প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, এসব আইনজীবীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির আইনজীবীরা বহিরাগত আইনজীবীদের নিয়ে আপিল বিভাগে অবস্থান করছেন। এটা আইনজীবী সমাজ মেনে নেবে না। আদালত অবমাননার মতো কাজ করলে আইনজীবীরা বসে থাকবে না।’

এর আগে আজ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন  খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানিকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বৃহত্তর আপিল বেঞ্চে নজিরবিহীন হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় বিচারপতিরা এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন।

পরে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে এজলাসে ওঠেন বিচারপতিরা। অন্য মামলার শুনানি করতে চাইলে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। শুরু হয় হৈচৈ। বর্তমানে বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বসে আছেন বিচারপতিরা।

এর আগে আজ শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যবিষয়ক রিপোর্ট তৈরি হয়নি। আরো দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।’

এর বিরোধিতা করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপূর্ণ। তার আগে জামিনের ব্যবস্থা করুন।’

এ অবস্থায় আপিল বিভাগ মেডিকেল রিপোর্ট দাখিলের জন্য ১১ ডিসেম্বর এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। তখন আদালতে অবস্থানরত বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ‘এ আদেশ মানি না’ বলে উচ্চ স্বরে কথা বলতে থাকেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও তাঁদের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। শুরু হয় দুপক্ষের বাকবিতণ্ডা।

একপর্যায়ে বিচারপতিরা এজলাস কক্ষ ত্যাগ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আপিল বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এজলাস কক্ষে অবস্থান করছেন।

গত ২৮ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যবিষয়ক মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডকে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।