বিএনপির সাবেক সাংসদ হাবিবকে ১০ বছর সাজা
সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মোট ৫০ জন আসামির মধ্যে আরো দুজনের ১০ বছর ও সাবেক যুবদল নেতা আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ তিনজনের নয় বছর এবং বাকি ৪৪ জন আসামিকে সর্বনিম্ন চার মাস থেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ূন কবীর এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, মামলার সব আসামির সাজা হওয়ায় দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, তাঁরা ন্যায়বিচার পাননি, উচ্চ আদালতে যাবেন।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি এ মামলার ৫০ আসামির মধ্যে কাঠগড়ায় উপস্থিত তালা-কলারোয়া আসনের দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৪ জনের জামিন বাতিল করেন আদালত। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আজ সকাল ১০টার পর এই রায় ঘোষণা হয়। রায়কে ঘিরে সাতক্ষীরা আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মামলায় আসামির সংখ্যা ৫০ জন। এর মধ্যে ১৫ জন পলাতক রয়েছেন। ৫০ জন আসামির মধ্যে টাইগার খোকন নামের একজন আগে থেকে অন্য মামলায় জেলহাজতে আটক রয়েছেন।
যাঁদের সাজা হয়েছে
যে ৫০ আসামির সাজা হয়েছে তাঁরা হলেন— সাবেক সংসদ সদস্য মো. হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া পৌরসভার দুইবারের সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা গাজী আক্তারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন ও আবদুর রকিব মোল্লা, মো. আব্দুল কাদের বাচ্চু, মো. আরিফুর রহমান ওরফে রঞ্জু, মো. নজরুল ইসলাম, রিপন, মো. আব্দুল রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. মফিজুল ইসলাম, মো. আব্দুল মজিদ, মো. হাসান আলী, মো. ইয়াছিন আলী, ময়না, মো. আব্দুস সাত্তার, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, মো. তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. আব্দুল মালেক, আব্দুর রব, মো. জহুরুল ইসলাম, মো. রবিউল ইসলাম, মো. গোলাম রসুল, রিংকু, মো. আব্দুল সামাদ, মো. আলাউদ্দিন, মো. আলতাফ হোসেন, সঞ্জু, মো. নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, মো. সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন, জাবিদ রায়হান লাকী, রকিব, ট্রলি শহিদুল, কনক, শেখ কামরুল ইসলাম, মো. মনিরুল ইসলাম, মো. ইয়াছিন আলী, শেলী, মো. শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, মো. সোহাগ হোসেন, মো. মাহাফুজুর রহমান মোল্লা, মো. আব্দুল গফফার গাজী ও মো. মাহফুজুর রহমান সাবু।
এ মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস. এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি ও শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ।
আসামিপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট শাহানারা পারভিন বকুল, অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাডভোকেট তোজাম্মেল হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সেলিম প্রমুখ। এ মামলায় আদালতে ২০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
‘সব আসামির সাজায় ন্যায়বিচার হয়েছে’
রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির বলেন, ‘আজ এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনার দিন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পরামর্শে ও নির্দেশে প্রায় চার-পাঁচশ নেতাকর্মী ও বিএনপির সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছিল। এই হামলার বিচার শুরু হয়েছিল, আজকে রায়ের মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটল। সাতক্ষীরার জনগণ কলঙ্কমুক্ত হলো।’
রায়ে আদালত হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আরিফ ও রিপন- এই তিনজনকে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা দিয়েছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরো বলেন, ‘বাচ্চু ও রঞ্জুকে নয় বছর করে সাজা দিয়েছেন। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কাউকে খালাস দেওয়া হয়নি। আজকের এই রায়ে দেশে ন্যায়বিচার কায়েম হলো। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং গণতন্ত্র সুদৃঢ় হয়েছে।’
রায়ে খুশি কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই রায়ে সরকার খুব একটা খুশি না। তবে রায়ের বিস্তারিত দেখার পর আমরা চিন্তা করব আমাদের আরো কিছু করার আছে কি না। যদি কিছু করার থাকে, নিশ্চয় হাইকোর্টে ইনহেন্সমেন্টের জন্য আমরা আপিল করব।’
‘এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর, অন্যান্য সেকশনে মোট সাজা প্রায় ২৬ বছর পর্যন্ত হতে পারত। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা হয়েছে। উচ্চ আদালতে যাব কি যাব না তা রায়ের কপি না দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমরা আলোচনা করব, পর্যালোচনা করব, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’, যোগ করেন আইনজীবী।
‘ন্যায়বিচার পাইনি, উচ্চ আদালতে যাব’
রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহানারা পারভিন বকুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তথ্য-উপাত্ত দেওয়া সত্ত্বেও আমরা এই রকম একটা রায় আশা করিনি। কারণ, ওইদিন হাবিবুল ইসলাম হাবিব যে কলারোয়ায় ছিলেন না তার যথেষ্ট প্রমাণ আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। প্রথমত, তাঁর নাম এফআইআরে ছিল না। দ্বিতীয়ত, বাদী তাঁর জবানবন্দিতে হাবিবের নাম বলেননি। তৃতীয়ত, যার ওপরে হামলার কথা বলা হয়েছে, তিনি সেদিন কলারোয়া থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে চার জায়গায় সভা করেছিলেন। নাভারণ, ঝিকরগাছা, খাজুরা ও যশোর। এই চার জায়গায় তিনি অনেকের নাম বললেও হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নাম বলেননি। তার মানে এই ঘটনায় তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও সাজা দেওয়া হলো।’
রায়ে সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে আইনজীবী আরো বলেন, ‘এই রায়ে সন্তুষ্ট হবো কীভাবে? আমরা তো ন্যায়বিচারই পাইনি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করি, উচ্চ আদালত অবশ্যই আমাদের ন্যায়বিচার দেবেন।’
আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি মিছিল
রায় ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পাল্টাপাল্টি মিছিল বের করে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল বের করে। রায়কে যুগান্তকারী বলে আখ্যায়িত করে তারা। তারা জানায়, এতে সাতক্ষীরার জনগণ কলঙ্কমুক্ত হলো। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অপরদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, কামরুজ্জান ভুট্টোর নেতৃত্বে দলীয় আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং সমাবেশ করে। তারা রায় প্রত্যাখ্যান করে জানায়, রায়ে আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি।
বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীর সাজা রাজনৈতিক কারণে : রিজভী
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সাতক্ষীরায় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব দাবি করেন, ‘২০০২ সালে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মিথ্যা অভিযোগে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সাতক্ষীরার স্থানীয় নেতাদের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেওয়া হয়। অথচ সেদিন হাবিবুল ইসলাম হাবিব ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস করার অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন পর এই মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে।’
‘এই মিথ্যা মামলাটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশোধ গ্রহণের খেলায় মেতেছে; তার প্রমাণ ঢাকা থেকে একজন অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল ও তিনজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়েছিল মামলাটিকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য, যা নজিরবিহীন ঘটনা।’
রিজভী আরো বলেন, ‘তার মানে কী, সরকার যা চায়, সাজাটি যাতে নিশ্চিত হয়, এ কারণেই একজন অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল ও তিনজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে সেখানে পাঠানো হয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সব নেতাকর্মীর মামলা প্রত্যাহার করে তাঁদের মুক্তির জোর দাবি জানান রুহুল কবির রিজভী।
রায় শুনেই হাবিবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন মেয়ে
ঠিক সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ূন কবীর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার রায় পড়া শুরু করেন। ম্যাজিস্ট্রেট যখন রায় পড়ছিলেন তখন সব আসামি তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তাকিয়ে ছিলেন সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও তাঁর মেয়ে কানেতা ইয়া লাম লাম।
রায় পড়ার সময় আসামিদের ভেতরে উৎকণ্ঠা দেখা যায়। বেশির ভাগ আসামিই মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে ছিলেন এজলাস কক্ষে। সে সময় চার-পাঁচজন আসামিকে চোখ মুছতে দেখা যায়। কাঁদতে দেখা যায় হাবিবের মেয়ে কানেতাকে। এভাবে ১০ মিনিট পর অর্থাৎ ১০টা ২০ মিনিটে রায় পড়া শেষ করেন ম্যাজিস্ট্রেট।
রায় ঘোষণা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাবিবকে জড়িয়ে ধরেন তাঁর মেয়ে কানেতা। সে সময় কানেতা কাঁদতে কাঁদতে তাঁর বাবাকে বলেন, ‘তোমার কিছুই হবে না বাবা। আমরা তোমাকে নিরপরাধ প্রমাণ করেই ছাড়ব।’ এই কথা শুনে কেঁদে ফেলেন সাবেক সাংসদ হাবিবও। মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে বলেন, ‘শান্ত হও মা। আমরা উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাব।’
বাবা হাবিবের বুকের ভেতর থেকে কানেতা বলতে থাকেন, ‘আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এখানে সব রাজাকারের দল। আর তাই তারা এই রায় দিয়েছে।’ সে সময় গালাগাল করতে থাকেন কানেতা। তারপর হাবিব তাঁর মেয়েকে পুনরায় বুকে টেনে নিয়ে বলতে থাকেন, ‘কাউকে কিছু বলার দরকার নেই মা। আল্লাহ এর বিচার করবেন। এখানে যে সব আসামি আছেন, তারাও সবাই জানেন; আমি তখন কলারোয়ায় ছিলাম না। ঘটনাস্থলে না থেকেও আমাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে।’
এরপর একে একে আসামিদের এজলাস কক্ষ থেকে বের করা হয়। সে সময় কয়েকজন আসামিকে কাঁদতে দেখা যায়। কাঁদতে কাঁদতে একজন আসামি বলছিলেন, ‘এই রায় মানি না। আমার কোনো দোষ নেই। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’
আসামিদের যখন আদালত ভবন থেকে নিচে নামানো হয় তখন তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছলছল চোখে হাত নাড়িয়ে আসামিদের বিদায় জানান তাদের পরিবারের সদস্যরা। এরপর ৩৫ জন আসামিকে প্রিজনভ্যানে তুলে কারাগারে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভ্যানে করে যখন আসামিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন হাত নেড়ে হাবিব বলছিলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আপনাদের সঙ্গে আছি; আপনারা ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।’
মামলার অভিযোগপত্রে যা আছে
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরায় একজন মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখে মাগুরায় ফিরে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসামিরা অত্যন্ত দুর্দান্ত, গুণ্ডা ও আগ্নেয়াস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, দলীয় ক্যাডার। মামলার ঘটনার দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পরামর্শে ও নির্দেশক্রমে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, হাত বোমা, রামদা, লোহার রড, বাঁশের লাঠি, শাবল ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গুরুতর জখম ও খুন করার প্রস্তুতি নিয়ে সাতক্ষীরা জ-০৪-০০২৯ বাসটি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কলারোয়ায় পৌঁছালে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর সফরসঙ্গী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগনেতা ফাতেমা জামান সাথী, আব্দুল মতিন, জোবায়দুল হক রাসেল ও শহীদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন। একইসময় সাতক্ষীরার বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশী আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন। পরে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এর মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলায় এক আসামি রকিব ওরফে রাকিবুর রহমানের বয়স ঘটনার সময় ১০ বছর ছিল উল্লেখ করে হাইকোর্টে মামলা বাতিলের আবেদন করা হয়। ২০১৭ সালে ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ৮ অক্টোবর রুলটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।