বিএসএমএমইউতে করোনা কিটে ত্রুটি, ভোগান্তিতে ৮০০ মানুষ

Looks like you've blocked notifications!

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার ও রোববার অন্তত ৮০০ জন মানুষ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নমুনা দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, একদিনের মধ্যে সবার করোনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার কথা। কিন্তু চার-পাঁচ দিনেও তারা ফলাফল পায়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সবাই।

ভোগান্তিতে পড়া মানুষজন যখন হাসপাতালে যোগাযোগ করেন, সে সময় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলেছে, করোনার পরীক্ষার কিটে সমস্যা থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য পুনরায় নমুনা দিতে হবে। এ ছাড়া তাদের হাতে আর কোনো পথ খোলা নেই।

এদিকে করোনা পরীক্ষার ফলাফল না পেয়ে ভোগান্তির শেষ নেই ভুক্তভোগীদের। এই যেমন, পাঁচ বছর বয়সী জান্নাতুল মাওয়ার। শিশুটি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা থেকে এসে নমুনা দিয়েছিল বিএসএমএমইউতে। তার শরীরে বাসা বেঁধেছে জটিল রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘থাইরোগ্রাসাল ডাক্ট চেস্ট’ নামে পরিচিত রোগটি। যা গলার শ্বাসনালীর ওপর টিউমারের মতো হয়ে ফেটে গেছে।

এই রোগের চিকিৎসা করতে প্রথমে জান্নাতুল মাওয়াকে নোয়াখালীর কয়েকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা পায়নি কোথাও। ফলে তাকে ঢাকায় আনতে বাধ্য হয় তার পরিবার। বর্তমানে জান্নাতুল বিএসএমএমইউয়ের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরাফদারের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছে।

ডা. কামরুল হাসান শিশুটিকে দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যথায় সংক্রমণ (ইনফেকশান) বেড়ে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। সে অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনার পরীক্ষা ছাড়া অস্ত্রোপচার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এদিকে জান্নাতুলের পরিবারেও করোনা রোগী রয়েছে। ফলে বিএসএমএমইউতে করোনা পরীক্ষার জন্য গত রোববার তার নমুনা দেওয়া হয়।

করোনার নমুনা সংগ্রহ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফলাফল জানাতে পারেনি চার দিনেও। অথচ নিয়ম অনুযায়ী এক দিনের মধ্যেই ফলাফল পাওয়ার কথা ছিল। আর পরীক্ষার ফলাফল না পাওয়ায় আটকে আছে শিশুটির অস্ত্রোপচারও। এতে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিশুটিকে। শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে আজ বুধবার শিশুটির অভিভাবক জাকের হোসেন যোগাযোগ করেন বিএসএমএমইউতে। পরে সেখান থেকে জানানো হয়, ‘কিটের টেকনিক্যাল সমস্যা’র কথা।

এ বিষয়ে জান্নাতুল মাওয়ার মা আরাধান আক্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জান্নাতুল মাওয়ার বয়স যখন তিন বছর তখন তার গলার শ্বাসনালীর ওপরে একটি ফোঁড়ার মতো ওঠে। ক্রমে এটি বড় হতে থাকে। কয়েক মাস আগে এটি বড় হয়ে বাইরের অংশে ফেঁটে পড়ে। প্রতিনিয়ত রক্তপূঁজ পানি বের হচ্ছে। এ মুহূর্তে অপারেশন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। অপারেশনে প্রায় দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন। এ মুহূর্তে তা আমার সাধ্যের বাইরে। তারপরও টাকা জোগাড় করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’

আরাধান আক্তার আরো বলেন, “আগামীকাল আমার মেয়ের অপারেশন করার কথা থাকলেও আমরা তা করাতে পারছি না। কারণ, করোনার রিপোর্ট না পেয়ে চিকিৎসক অপারেশন করবেন না। সর্বশেষ আজ বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ এক ক্ষুদেবার্তায় আমাকে জানায়, ‘টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে আগের টেস্টের ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়নি। ওই বার্তায় পুনরায় নমুনা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়।”

শুধু জান্নাতুল মাওয়া নয়, এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছে অন্তত ৮০০ মানুষ। তাদের ভেতরে একজন নাজমুল হোসাইন। তিনি নমুনা দিয়েছিলেন গত শনিবার। তিনি ভেবেছিলেন ওইদিন সন্ধ্যায় করোনা পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারবেন। কিন্তু জানতে পারেননি।

নাজমুল হোসাইন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম রিপোর্ট পাব শনিবার রাতেই। কিন্তু পাইনি। আমার উপসর্গ ছিল কিন্তু তা বেশি নয়। রিপোর্ট না পাওয়ায় এতদিন পরিবারের সঙ্গেই ছিলাম। খুব বেশি বাছ-বিচার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। শরীরের অবস্থা আজ একটু বেশি খারাপ ছিল। তাই উপায় না পেয়ে আজ একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছি। সন্ধ্যায় রিপোর্ট পেলাম পজিটিভ।  এখন খারাপ লাগছে বাবা-মায়ের জন্য। আগে থেকে রিপোর্ট পেলে আরো সতর্ক থাকা যেত। কাল বাবা-মাকেও করোনার পরীক্ষা করাব।’

রোগীদের করোনা পরীক্ষার ফলাফল দিতে না পারার কারণ জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এতদিন চীনের তৈরি স্যানশিউর নামের একটি কিট ব্যবহার করা হতো। যেটি খুবই মানসম্মত কিট। কিন্তু হঠাৎ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের বলা হলো, এখন থেকে তমা কনস্ট্রাকশন ও জেনেটিকস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ‘মোলজেন’ নামের একটি কিট ব্যবহার করার জন্য। এটি একটি নতুন কিট, তবে ত্রুটিযুক্ত। যার ‘কালেকটিং কমপোনেন্ট’ যাচ্ছেতাই। পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখি নমুনা সংগ্রহ ঠিক মতো হয়নি। তো নমুনাই যদি আপনি ঠিক মতো সংগ্রহ করতে না পারেন পরীক্ষা করবেন কীভাবে?’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কিটের সমস্যা থাকায় আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দুই দিনে অন্তত ৮০০ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। এই দায় আমরা কোনোভাবেই এড়াতে পারি না। বিষয়টি আমাদের হাসপাতালের জন্য খুবই বিব্রতকর। আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) দপ্তরে জানিয়েছি। আমরা আবার আগের ব্যবহৃত কিট দিয়েই নমুনা পরীক্ষা করা শুরু করেছি।’

অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী জানান, ভোগান্তির শিকার ব্যক্তিদের মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়েছে। তারা ওই বার্তা দেখিয়ে আবার নমুনা দিতে পারবেন। এজন্য অতিরিক্ত কোনো খরচ দিতে হবে না।