বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে লাগবে ছয় মাস
রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে’র ভেতরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। রাজউকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ সম্পন্ন করবে ওই প্রতিষ্ঠান। এমনটিই জানিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়। ভবন ভাঙার কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নূর আলম, রাজউকের সদস্যরা এবং হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এক্সকেভেটর, বুলডোজার, কংক্রিট জ্যাকহামার, দীর্ঘ ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেন, ওয়েল্ডিং মেশিন, ড্রাম ট্রাক, গ্যাস কাটারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে ভবনের উপর অংশ হতে নিচের অংশ ধারাবাহিকভাবে অপসারণ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ভবন ভাঙার কার্যক্রম উদ্বোধন করে গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাতিরঝিলের উপরে অপরিকল্পিত ও বেআইনিভাবে বিজিএমইএ ভবন গড়ে উঠেছিল। চমৎকার ঢাকার ওপর বিষফোঁড়ার মতো এই ভবন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটি অপসারণের জন্য আমরা পরিকল্পনা নিই। এ কার্যক্রম সার্বক্ষণিক দেখভাল করার জন্য বুয়েট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধিসহ নগর ও ইমারত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম করা হয়েছে। এছাড়া রাজউকের নিজস্ব একটি টিমও এ কাজ নিয়মিত দেখভাল করবে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘ভবনের প্রতিটি স্তর ভাঙার সাথে সাথে ভাঙা অংশ দ্রুত সরিয়ে নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় রাখা হবে যাতে কোনোভাবেই র্যাংগস ভবনের মতো প্রাণহানি না ঘটে। ভবন ভাঙার কাজে যেন পরিবেশ বিপন্ন না হয়, সেজন্য আমরা সব প্রস্তুতি রেখেছি। সুন্দর ঢাকা গড়া শুধু রাজউক বা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। গণমাধ্যমসহ সকলের সহযোগিতা নিয়ে হাতিরঝিলের মূল গভীরতার সাথে মিল রেখে এ ভবন তুলে ফেলা হবে, যাতে পানির গতি বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নির্বিঘ্নে যাতে ব্যবসা করতে পারে, সেজন্য ভবন ভাঙার বহু পূর্বের প্রস্তুতির পরও বিজিএমইএকে তাদের নিজস্ব মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পোশাক শিল্পের রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত। সরকারের দায়িত্ব জনগণের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য কাজ করা। ভবন ভাঙতে রাষ্ট্রের কোনো টাকা ব্যয় হচ্ছে না। যারা ভবনটি ভাঙছেন তারা নিজেদের খরচে ভবন ভেঙে রাষ্ট্রকে টাকা দিচ্ছেন। ফলে রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বা বিজিএমইএর জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। বরং দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলকে আরো পরিবেশসম্মত ও সুন্দর করা হচ্ছে। আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে’।
হাতিরঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের অনুরোধ করব হাতিরঝিল ঘুরে দেখার জন্য। এখন পানিতে সেরকম দুর্গন্ধ নেই। অস্ট্রেলিয়ান প্রযুক্তি দিয়ে প্রতিদিন এখানকার পানি বিশুদ্ধ করা হবে। পানিতে যেন আবর্জনা না আসে সে ব্যবস্থা করা হবে। পানির আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিনাশ করা হবে। তবে আমাদেরও নাগরিক দায়িত্ব আছে, আমরা যাতে নিজেদের পয়োবর্জ্য হাতিরঝিলে ফেলার মতো দায়িত্বহীন কাজ না করি। হাতিরঝিলের অনুমোদিত এলাকার ভেতরে ন্যুনতম কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনা আমরা সরিয়ে দেব।’
অবৈধভাবে ভবন নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে বড় করে দেখি রোগ সারানোকে। রোগের কারণ নিয়ে অবশ্যই রিসার্চ করতে হবে, কিন্তু রোগ সারাতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়ম বিরোধী প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স কার্যক্রম বাস্তবায়নে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে আমরা অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। যেখানে যে অনিয়ম আছে, সে অনিয়মের সাথে যারাই জড়িত, আমরা কাউকেই ছাড় দেব না।’