বিমানের ইমেইল সার্ভার হ্যাক হলেও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি : বিমান প্রতিমন্ত্রী
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইমেইল সার্ভার হ্যাক করা চক্র মুক্তিপণ চায়নি। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় বিমানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।’ রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আজ রোববার (২৬ মার্চ) দুপুরে ‘মুজিবের বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় মাহবুব আলীর পাশেই ছিলেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম। তিনিও দাবি করেন, ‘মুক্তিপণ দাবি করা সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।’
গত ১৭ মার্চ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইমেইল সার্ভার হ্যাক হয়। সেদিন বেলা সোয়া ২টার দিকে সার্ভার হাতিয়ে নিয়ে হ্যাকাররা বিমানকে প্রথম নিজেদের দাবির কথা জানায়।
বিমান সূত্র বলেছে, ‘২১ মার্চ হ্যাকাররা জানিয়েছে, তাদের কাছে বিমানের ১০০ গিগাবাইটের বেশি ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া বিমানের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক থেকে অনেক ডাটাবেজ তারা ডাউনলোড করে রেখেছে। বিমান যদি তাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে তারা নিজেদের ব্লগে এগুলো প্রকাশ করে দেবে। এরপর ২২ মার্চ বিকেলে হ্যাকাররা বিমানকে আরেকটি বার্তা পাঠায়। ওই বার্তায় বলা হয়, ‘গণমাধ্যমে আপনারা বলছেন, কোনো তথ্য ফাঁস হয়নি। কিন্তু আপনারা ভুল।’
ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য, বিমানের যাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাসপোর্টের তথ্যসহ আরও বেশ কিছু তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও হ্যাকাররা বিমানকে জানায়।
সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার ছয় দিন পর গত ২৩ মার্চ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিমান তাদের ইমেইলে সার্ভার র্যানসমওয়্যার আক্রান্ত হয়েছে বলে জানায়।
হ্যাকাররা বিমানের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছে একটি সূত্র জানায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমান পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘হ্যাকাররা টাকা দাবি করেছে বলে যে কথাটা উঠেছে, সেটি সঠিক নয়। এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে বিমান আনুষ্ঠানিক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। টাকা দাবি করার ঘটনা ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘হ্যাকাররা ফায়ারওয়ালের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এ কারণে তারা ক্ষতিও বেশি করতে পারেনি। তারা তেমন কোনো তথ্য নিতে পারেনি। সাইবার অ্যাটাক হলে যা কিছু করতে হয় তা বিমানের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। জিডি করা হয়েছে, সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
কেন ৯ দিনেও বিমানের ইমেইল সার্ভার হ্যাকারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি, জানতে চাইলে বিমানের এমডি শফিউল আজিম বলেন, ‘বিমানের পরিচালনায় বা অপারেশনাল কোনো কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি, যথারীতি কাজ করছে। কোনো বিষয়ে অসুবিধা হয়নি। আজকেও কাজ চলছে। আমরা আশা করি, আগামীকাল সোমবার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এ ঘটনার একটি পরিপূর্ণ চিত্র দিতে পারব।’
সাইবার হামলার আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে শফিউল আজিম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। যৌথভাবে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এই দলের কাজ শেষ হলে জানা যাবে। তবে বিমানের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
বিমানের নিরাপত্তাব্যবস্থায় গাফিলতির কারণে হ্যাকাররা এ ঘটনা ঘটাল কিনা, জানতে চাইলে এমডি বলেন, ‘আমাদের কোনো ঘাটতি থেকে থাকলে সেগুলো আমরা সামনে তুলে নিয়ে আসব। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঠেকানো যায়, সেটি নিয়েও বিমান কাজ করবে।’