বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী কমে যাওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ সব বেসরকারি এয়ারলাইনসকে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমান চলাচলের নিয়মিত রুটে বিশেষ কার্গো বিমান চললেও, চীন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কয়েকটি ছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে সব যাত্রীবাহী বিমান চলাচল স্থগিত রয়েছে।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত যাত্রী চলাচলের ফ্লাইটও স্থগিত করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এখন পর্যন্ত ২৩৫ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং এ ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে।’

এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক ও নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এয়ারলাইনসগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে।’

মফিজুর রহমান আরো বলেন, ‘এ রকম অবস্থা থাকলে দেশীয় বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো সরকারের সহযোগিতা ছাড়া চালানো যাবে না। এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি এখন বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মানুষের চলাচলই যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে উড়োজাহাজ চলবে কীভাবে?’

মফিজুল বলেন, ‘উড়োজাহাজ না চললেও খরচ থেমে নেই। শুধু উড়োজাহাজের কিস্তি পরিশোধ নয়, সিভিল এভিয়েশনের চার্জ, কর্মীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ নানা ব্যয় টানতে গিয়ে ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি।’

নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো জানান, এ লকডাউনে বিভিন্ন কোম্পানিকে বিমানের পার্কিং চার্জ এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে অফিসগুলোর জন্য ভাড়া দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এ সংকটে আমরা সরকারকে চার্জ কমানোর অনুরোধ করছি।’

গত ২১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১০টি দেশের সঙ্গে সব আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করে বাংলাদেশ। পরে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়।

যাত্রীবাহী বিমান চলাচল স্থগিত করা দেশগুলো হলো—মালয়েশিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), তুরস্ক, ভারত ও বাহরাইন।

বাংলাদেশ ১৫ মার্চ সব অন অ্যারাইভাল ভিসা দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছিল, যা এখনো কার্যকর রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য বাদে সব ইউরোপীয় দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

এরপর ১৯ মার্চ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস তাদের দুবাই ও আবুধাবির সব ফ্লাইট বাতিল করে দেয়। এ ছাড়া, বাংলাদেশ বিমান ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস আগে থেকে টিকিট বুক করা সব যাত্রীর ভাড়া ফেরত দিয়েছে।

বাংলাদেশ বিমানের পরিচালক মুকাব্বির হোসেন বলেন, ‘১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব ফ্লাইট স্থগিত রয়েছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ সময় আরো বাড়তে পারে।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর পুনরায় সব ফ্লাইটের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি যাত্রীদের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে বিমান শিল্পের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে মহামারি কোভিড-১৯। যাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়ে বিমানগুলো খালি থাকায় ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইএটিএ) গত ৫ মার্চ ধারণা করেছিল, বিমানের যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে মোট ৬৩ থেকে ১১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হতে পারে।

আইএটিএ ৫ মার্চের প্রাক্কলনের দুই সপ্তাহ আগে প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাজস্ব ক্ষতির অনুমান করেছিল। ১৭ মার্চের মধ্যে আইএটিএ জানিয়েছে যে, তাদের ৫ মার্চের প্রাক্কলনটি ‘পুরোনো’ এবং এয়ারলাইনসগুলোকে এ সংকট থেকে বাঁচতে ২০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার দরকার হবে।

২৪ মার্চ আইএটিএ তাদের রাজস্ব ক্ষতির হিসাব আরো সংশোধন করেছে এবং বিশ্বব্যাপী তা প্রায় ৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২৫২ বিলিয়ন ডলার হবে বলে জানিয়েছে।