বিশ্বমঞ্চে দেশকে তুলে ধরতে চায় পিএইচপি কোরআনের আলোর সেরা রাহাত

Looks like you've blocked notifications!

রমজান আলী সরদার একজন মুদি দোকানদার। সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার পইজুরি ইউনিয়নের পূর্বচর পইজুরি গ্রামের বাজারে তাঁর দোকান। দোকানে একটি টেলিভিশন আছে। ওই টেলিভিশনে তিনি সেই ২০০৯ সাল থেকে জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা পিএইচপি কোরআনের আলো দেখেন অনুষ্ঠানটি দেখে রমজান আলীর খুব ইচ্ছে জাগতো, তাঁর কোনো ছেলেও যদি এই কোরআন প্রতিযোগিতায় সেরা হয়ে পুরস্কার জিততো!

রমজান আলীর তিন ছেলে। ছোট ছেলে মোহাম্মদ আবু রাহাত ২০১০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করে। বড় দুই ছেলে লেখাপড়া করে স্কুল-কলেজে। রাহাতকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গোপালপুর আল মাদিনাতুল মনোওয়ারা হাফিজি মাদরাসায়। ওই মাদরাসা থেকে মাত্র নয় মাসে কোরআন মুখস্ত করে ফেলে রাহাত

রমজান আলী তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে ছোট ছেলে রাহাতকে ঢাকার মহাখালীর কোরআনের আলো ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান। এরপর গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে রাহাত প্রথম হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা পিএইচপি কোরআনের আলোতে অংশগ্রহণ করে। তবে সেসময় সে মাঝপথে বাদ পড়ে যায় কিন্তু সে মনোবল হারায়নি। শুরু করে আরো কঠোর পরিশ্রম করা। পরিশ্রমের ফলে সর্ববৃহৎ টেলিভিশনভিত্তিক জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা-২০২০ পিএইচপি কোরআনের আলোয় প্রথম স্থান অধিকার করেছে সিরাজগঞ্জের মোহাম্মদ আবু রাহাত

আজ শুক্রবার বিকেলে রমজান আলী তাঁর স্বপ্নের কথা বলছিলেন এনটিভি অনলাইনকে। একই সঙ্গে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়াতে বাবার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় রাহাতও ভীষণ খুশি। এখন রাহাতের চিন্তা, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে নিজেকে মেলে ধরা আর দেশের হয়ে সুনাম কুড়িয়ে আনা

রমজান আলী কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘১২ বছর আগে এনটিভিতে এই অনুষ্ঠানটি যখন শুরু হয় তখন থেকেই আমি দেখতাম। রোজার সময় দোকানে বসে দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম, আমার ছেলে যদি কখনো চ্যাম্পিয়ন হতো, তাহলে আমার খুব ভালো লাগতো। এখন আমার ছেলে সত্যিই সেরা হয়েছে। গর্বে আমার বুকটা ভরে যাচ্ছে। বহু লোক আমাকে ফোন করছেন। রাহাতের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছেন। আমি সম্মানিত বোধ করছি। আজ এলাকার অনেকেই আমার ছেলেকে সংবর্ধনা দিয়েছে। আমি আজ ভীষণ খুশি।’

মোহাম্মদ আবু রাহাত বলে, ‘আমার আব্বার খুব ইচ্ছে ছিল আমি কোরআনের হাফেজ হব এবং সব স্থানে কোরআন তেলাওয়াত করে মানুষকে আনন্দ দিব এনটিভির অনুষ্ঠানে প্রথম হওয়ার পেছনে আমার বাবার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি এরপর মা, তারপর আমাকে গড়ে তুলতে কষ্ট করেছেন আমার ওস্তাদ। এ ছাড়া আমার জীবনে অনেকের অবদান আছে। আর সবকিছুর জন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ দেব আল্লাহকে।’

হাফেজ আবু রাহাত বলে, ‘বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি এখানে আসতে আমাকেও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখন সামনে একটিই চাওয়া, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা,। সেখানেও নিজেকে সেরা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করব। দেশের হয়ে পুরস্কার আর সম্মান বয়ে আনব। করোনাভাইরাস শেষ হলে আবার ঢাকায় যাব,। তারপর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেব। আমি সারাজীবন সৃষ্টিকর্তার পথেই থাকতে চাই।’

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের ভালোবাসায় বারবার সিক্ত হয়েছে পিএইচপি কোরআনের আলোর এ অনুষ্ঠান। খুদে হাফেজদের কণ্ঠে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বাণী দর্শকদের যেমন বিমোহিত করেছে, তেমনি দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে কোরআনের আলোকিত বার্তাও। কণ্ঠের মাধুর্য, শুদ্ধ উচ্চারণ আর ইসলামের শান্তিময় আবেশ ছড়িয়ে রমজান মাসজুড়ে দর্শকদের মহাগ্রন্থ আল কোরআনের শ্বাশত বাণীতে মুগ্ধ করে রেখেছিল এসব খুদে হাফেজ

এবারের। প্রতিযোগিতায় রাহাত প্রথম স্থান অধিকার করেছে দ্বিতীয় হয়েছে সিলেটের প্রতিযোগী হাফেজ মুহাম্মদ আখতারুল ইসলাম। তৃতীয় হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিযোগী হাফেজ মুহাম্মদ সারোয়ার আহমাদ। গত বৃহস্পতিবার তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিচারকরা। অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার এনটিভি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিএইচপি কোরআনের আলোর প্রযোজক শাহ সাইফ বলেন, ‘আমি শুরু থেকে এনটিভির এই অনুষ্ঠানটির প্রযোজক হিসেবে কাজ করছি। আমরা সব সময় কোরআনের আলোর প্রতিভার সন্ধানে কাজ করে চলেছি। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত চাপা পড়ে থাকা মেধাকে আমরা বের করে আনার চেষ্টা করছি এক যুগে প্রায় ২০ হাজার প্রতিযোগী অনুষ্ঠানটিতে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছে। প্রতি বছর কয়েকজন খুব ভালো করছে। জেলা শহর থেকে বাছতে বাছতে ঢাকা পর্যন্ত আসে হয়তো ৩০ জনের মতো। সেখান থেকে তিনজন নির্বাচিত হয়।’

শাহ সাইফ আরো বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত পিএইচপি কোরআনের আলোতে পুরস্কার পেয়েছে এমন অনেকেই বিশ্ব পরিমণ্ডলেও খ্যাতি কুড়িয়েছে, জিতেছে পুরস্কার। বিদেশের মাটিতে কোরআন তেলাওয়াত করে অন্তত ১৮ জন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়ে পুরস্কার জিতেছে। সামনে আরো যারা এখান থেকে জিতবে তারাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো কিছু করবে বলে আমরা আশা করি।’