বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ু উদ্বাস্তুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন কাল

Looks like you've blocked notifications!
কক্সবাজারের সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ু উদ্বাস্তুর আশ্রয়ণ প্রকল্প। ছবি : এনটিভি

কক্সবাজারের সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ু উদ্বাস্তুর আশ্রয়ণ প্রকল্প। শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে নামকরণ করা এই প্রকল্পে ১৩৯টি পাঁচতলাবিশিষ্ট ভবন নির্মিত হচ্ছে। এখানে পুনর্বাসন করা হবে জলবায়ু উদ্বাস্তু প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারকে। আরো থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আয়বর্ধক বিভিন্ন প্রকল্প, পর্যটন জোনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন শেষে উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে ফ্ল্যাটের চাবি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা হয়। মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ উপকূলের বিশাল এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। এতে গৃহহারা হয় হাজার হাজার মানুষ। এসব মানুষ জীবনের তাগিদে আশ্রয় নেয় কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দরের পশ্চিমে বালিয়াড়ী ও ঝাউবাগান এলাকায়, যা পরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে রূপান্তরিত হয়। যেখানে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। জলবায়ু উদ্বাস্তু এসব মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে আসছিল। বিশ্বমানের পর্যটনশিল্প বিকাশ ও ভৌগোলিক গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হচ্ছে। বিমানবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরাটেক ও সমিতিপাড়া এলাকার প্রায় ৭০০ একর খাস জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। অধিগ্রহণের আওতায় পড়া জমিতে চার হাজার ৪০৯টি পরিবার বাস করত।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে এক জনসভায় এসব জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রহণ করা হয় খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ  প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের বাকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প’। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রথম পর্বে পাঁচতলাবিশিষ্ট ১৯টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ৬০০ পরিবার পাচ্ছে নতুন ফ্ল্যাট। কাল ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন শেষে উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে ফ্ল্যাটের চাবি।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শনকালে  সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ জানান, এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে।       

বাকখালী নদীর পাশে নয়নাভিরাম জায়গায় এ প্রকল্প করা হয়েছে। নানা চ্যালেঞ্জের মুখে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা ঘূর্ণিঝড়ে যাতে আশ্রয়ণ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য বাকখালী নদীর তীরে ব্লক দিয়ে উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।  

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত যেসব জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার আছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প খুরুশকুলে করেছেন। পাঁচতলাবিশিষ্ট ১৯টি ভবন প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেখানে ৬০০ পরিবারকে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ হয়েছে। কাল ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তালিকাভুক্ত চার হাজার ৪০৯ জনের সবাই পর্যায়ক্রমে ফ্ল্যাট পাবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয়টি হচ্ছে, নির্মিত ২০টি অত্যাধুনিক ভবনের নাম প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে লিখে নামকরণ করেন। কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আবহমান বাংলার প্রকৃতি এবং কক্সবাজারের নানা স্থান নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর নিজ হাতে লেখা নামগুলো হচ্ছে : ১. সাম্পান, ২. কেওড়া, ৩. রজনীগন্ধা, ৪. গন্ধরাজ, ৫. হাসনাহেনা, ৬. কামিনী, ৭. গুলমোহর, ৮. গোলাপ, ৯. সোনালী, ১০. নীলাম্বরী, ১১. ঝিনুক, ১২. কোরাল, ১৩. মুক্তা, ১৪. প্রবাল, ১৫. সোপান, ১৬. মনখালী, ১৭. শনখালী, ১৮. দোলনচাঁপা, ১৯. ইনানী ও ২০. বাঁকখালী।  

খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, এ প্রকল্পে চারটি জোন রয়েছে। আবাসিক জোন, পর্যটন জোন, শুঁটকি মহাল ও বাপার জোন। আবাসিক জোনে পাঁচতলাবিশিষ্ট ১৩৯টি ভবনে চার হাজার ৪০৯ উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।

মাহবুব হোসেন জানান, দেশে এটিই প্রথম সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক বাজেটের আশ্রয়ণ প্রকল্প। যার মধ্যে শেখ হাসিনা টাওয়ার নামে একটি ১০ তলাবিশিষ্ট সুউচ্চ ভবনও থাকবে। এ প্রকল্পে পরিবারের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল, মসজিদ, স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতালসহ বিনোদনের পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানের জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।