বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে শায়িত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
কালজয়ী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা, একাত্তরের মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলার নির্বাহী সম্পাদক, দেশবরেণ্য সাংবাদিক, কলাম লেখক ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রী সেলিমা আফরোজ চৌধুরীর কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের টেনিস গ্রাউন্ডে তাঁর জানাজা হয়। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সংসদ সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম হেলাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক নেতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা।
আরও আগে সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধায় সিক্ত হন কালজয়ী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাঁর মরদেহের কফিন অনুষ্ঠানের মঞ্চে নেওয়ার পর এই শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আজ শনিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠন।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দীন। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ শ্রদ্ধা জানান। এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান।
আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, নূরুল ইসলাম নাহিদ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পক্ষ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ আজ শনিবার বেলা ১০টা ৫৭ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি- ২০২) ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। সকাল ১১টা ১৫ মিনিটের সময় সরকারের পক্ষ থেকে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ গ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী খান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ মরহুমের আত্মীয় স্বজন, গণমাধ্যমকর্মী, বিমান ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তা, বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বেলা ১১ টা ৫৫ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহটি বের করা হয় এবং শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে বিকেল ৪টায় তাঁর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবে নেওয়া হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
গত ১৯ মে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।