বৃষ্টির জন্য পাবনায় প্রার্থনা করে নামাজ আদায়

Looks like you've blocked notifications!

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে পাবনাসহ গোটা বাংলাদেশ। তীব্র গরমে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। সোমবার (১৭ এপ্রিল) পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়ে নামাজ আদায় ও মোনাজাত করেছেন পাবনাবাসী। ধর্মমতে একে ‘সালাতুল ইসতিসকার’ বলা হয়।

পাবনার যুবসমাজের আয়োজনে আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড খরা থেকে রেহাই পেতে মহান রবের কাছে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। নামাজ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জামেয়া আশরাফিয়া পাবনার শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা হারুনুর রশিদ।

নামাজ ও দোয়ায় ছাত্র, যুবকসহ শতাধিক ধর্মপ্রাণ অংশগ্রহণ করেন। তাওবাতুন নসুহার (একনিষ্ঠ তাওবা) মাধ্যমে আল্লাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি কামনা করে অতিরিক্ত ১২ তাকবিরের মাধ্যমে ২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়।

নামাজপূর্ব সংক্ষিপ্ত বয়ানে শায়খ হারুনুর রশিদ বলেন, পৃথিবীর মাটি যখন শুকিয়ে যায় বা অনাবৃষ্টি দেখা দেয় এবং কূপ ও ঝরনার পানি কমে যায় অথবা নদী শুকিয়ে যায়; তখন সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়। এই নামাজ ঈদের নামাজের সময়ের মতোই। মসজিদে নয় বরং খোলা মাঠে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। এই নামাজে কোনো আজান বা ইকামত নেই।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতরে থাকলে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যের তাপমাত্রাকে ধরা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে তা তীব্র তাপপ্রবাহ।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক বলেন, ঈশ্বরদীতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। সোমবার বেলা ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এদিকে তাপপ্রবাহের কারণে সূর্য ওঠার পরই উপজেলার পথঘাট তেতে উঠছে। পদ্মার ধু ধু বালুচরের দিক থেকে বয়ে আসছে তপ্ত হাওয়া। এমন আবহাওয়ায় সহজেই ক্লান্ত হয়ে উঠছেন মানুষ। প্রখর রোদ মাথায় নিয়ে মাঠে কাজ করছেন কৃষকেরা। অন্যদিকে এই উত্তাপের মধ্যেও ঈদের বাজারের দিকে ছুটছে মানুষ। তবে গরমের কারণে কেনাকাটা করে স্বস্তি পাচ্ছেন না কেউ কেউ।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দীন বলেন, আজ টানা ১৫ দিনের মতো এ অফিসের আওতাধীন এলাকাসমূহে কখনো দেশের সর্বোচ্চ আবার কখনো দ্বিতীয় স্থানের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সহজে দেখা মিলছে না বৃষ্টির। এবারের গরমে ভিন্নমাত্রা রয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই তাপদাহের মধ্যে ঠোঁট শুকিয়ে ও ফেটে যাচ্ছে। বাতাসের জ্বলীয়বাষ্প কম থাকায় মূলত এমন হচ্ছে। সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে রোদ তীব্র হচ্ছে, আর বেলা বাড়ার সাথে সাথে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুনঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসমা খান জানান, তীব্র খরতাপে কেনাকাটা করতে আসা নারীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাপদাহে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া উচিত নয়। এ অবস্থায় বেশি বেশি ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর ভিজিয়ে রাখা এবং বেশি বেশি তরল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।