বেনাপোলসহ স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবিতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা সকাল- সন্ধ্যা কর্মবিরতি চলছে বেনাপোল বন্দরসহ সারা দেশের স্থলবন্দরগুলোতে। আজ মঙ্গলবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধসহ বন্দরের পণ্য ওঠানামা ও খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
কাস্টমস ও বন্দরের ইন্টারনাল কার্যক্রম চলছে। সেই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী চালাচল রয়েছে স্বাভাবিক। ফলে দুই দেশের বন্দর এলাকায় শত শত পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে। ফলে উচ্চ পচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ ও শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল বন্দরে আটকা পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম।
আজ সকাল থেকে বন্দর ব্যবহারকারী পাঁচটি সংগঠনের লোকজন কাস্টমস ও বন্দরের সামনে অবস্থান নিয়েছে। কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০-এর কিছু কালো আইনের পরিবর্তন ও এইসএস কোড পরিবর্তন করে ২০০ শতাংশ জরিমানা আদায়ের প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর, ঢাকা কাস্টমস হাউস, আইসিটি, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, বন্দর, মোংলা বন্দর, হিলি বন্দর, সোনামসজিদ বন্দর ও ভোমরা স্থলবন্দরগুলোতেও একযোগে ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, বন্দর ব্যবহারকারীরা ধর্মঘট করলেও আমরা কাস্টমস হাউস, বন্দর ও চেকপোস্ট খোলা রেখেছি এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুলতান আহম্মেদ খান জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।
উল্লেখ্য, শুধু বেনাপোল কাস্টম হাউসে এই ধর্মঘটের ফলে একদিনে ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এদিকে আবু হোসাইন সুমন, মোংলা থেকে জানিয়েছেন, কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা ও পণ্য চালান শুল্কায়নে এইচএস কোড এবং সিপিসি নির্ধারণে প্রণীত বিভিন্ন আইন বাতিলের দাবিতে আজ সকাল থেকে মোংলা বন্দরে কর্মবিরতি পালন করছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। ফলে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সব পণ্য ওঠানামা ও পরিবহণের কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন প্রায় পাঁচ থেকে ছয়শ শ্রমিক-কর্মচারী।
বন্দর জেটিতে পণ্যের শুল্কায়ন ও ছাড়করণের কাজ করে থাকেন এসব সিঅ্যান্ডএফ শ্রমিক-কর্মচারীরা।
সংগঠনের মহাসচিব মো. সুলতান হোসেন খান বলেন, আমাদের এ দাবি না মানা পর্যন্ত মোংলা বন্দরসহ দেশের সব শুল্ক ভবন ও স্টেশনে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি চলবে। তাদের এ কর্মবিরতির ফলে মোংলা বন্দরসহ সব শুল্ক ভবন ও স্টেশনে পণ্যের শুল্কায়ন ও ছাড়করণের কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শিহাব উদ্দিন বিপু জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে সিঅ্যাডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি চলছে। তিন দফা দাবিতে নৌ, বিমান ও স্থলবন্দরে একদিনের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। কর্ম বিরতির কারণে আজ সকাল থেকে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে তিন কোটির টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। এসব রপ্তানি করা পণ্যর মধ্যে রয়েছে রড, সিমেন্ট, এলপিজি গ্যাসসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ ধরনের পণ্য।
আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোবারক হোসেন জানান, উত্তরাধিকার আইন, আমদানিকারকদের ভুলের খেসারত সিঅ্যাডএফ এজেন্টদের দেওয়ার পাশাপাশি এইচএস কোড নম্বর ভুল হলে সিঅ্যাডএফ এজেন্টদের দায়ী করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে এক বছর ধরে ফেডারেশনের কর্মকর্তা এনবিআরে চিঠি চালাচালি করলে বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।
বন্দরের শ্রমিক সরদার সিরাজুল হক বলেন, বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক আসা-যাওয়া করলেও কর্মবিরতির কারণে তা বন্ধ রয়েছে।