ব্যক্তিগত লাভের জন্য কোনো কাজ করিনি : ইকবাল মাহমুদ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আজ থেকে সুদীর্ঘ পাঁচ বছর আগে এমনি এক বসন্তে আপনাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেছিলাম। আজ আবার তেমনি আরেক বসন্তে আপনাদের কাছ থেকে হাসিমুখেই বিদায় নিচ্ছি। মানুষ আসে চলে যাওয়ার জন্য। এটাই নিয়ম।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিদায়ী সৌজন্য সাক্ষাতে এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সফলতা-ব্যর্থতা আপনাদের প্রাত্যহিক লেখনির মাধ্যমে আপনারাই প্রকাশ করেছেন। নতুন করে সফলতা-ব্যর্থতার কথা বলা হয়তো সঠিক হবে না। এ সফলতা-ব্যর্থতার বিশ্লেষণের ভার গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ তথা জনগণেরই ওপর ছেড়ে দিলাম। তার কারণ আমি সফলতার কথা বলতে গেলে তাতে পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, বিগত পাঁচ বছরে দুদকের যে আইনি ম্যান্ডেট রয়েছে তা কার্যকর করার জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিলাম। গণমাধ্যমের অনেক রিপোর্ট নিয়ে কমিশন অনুসন্ধান বা তদন্ত করেছে। গণমাধ্যমে আমাদের অনেক সমালোচনা হয়েছে, আবার প্রশংসাও হয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের অনেক সুপারিশ গ্রহণ করেছি। সমালোচনাকে সব সময়ই সাধুবাদ জানিয়েছি। আজ এ বিদায় বেলায়ও বলব, গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমেই পরিশুদ্ধ হওয়া যায়।
দুদকের বিদায়ী এ চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তিগত লাভের জন্য কোনো কাজ করি নাই। অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে জনগণের কাছে ক্ষমা চাই। সফলতা সবার, ব্যর্থতা আমার একার। দুর্নীতি দমনে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করি নাই। বিবেকের সঙ্গে কখনই প্রতারণা করি নাই। নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আইনের বাইরে কোনো কাজ করি নাই।
গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক যথেষ্ট ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান। নখ-দন্তহীন বাঘ এগুলো অতীত বিষয়। বর্তমান কমিশন একটি বার্তা দিতে সফল হয়েছে, তা হলো কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ক্ষমতা বা অর্থের প্রভাবে দুদককে প্রভাবিত করা যায়নি। অনেককেই আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বিধি অনুসারে দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনে দুদকের বিদ্যমান মেকানিজম সংস্কার করা যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটির পরিধি বাড়ানো যেতে পারে। প্রথিতযশা গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কিংবা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অথবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য এ জাতীয় কর্মপ্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। তবে এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।
এ ছাড়া দুদক কর্মকর্তাদের কল্যাণে যে সব কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে তার বিবরণ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই তাদের যাতায়াতের পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। প্রণোদনা হিসেবে রেশন সুবিধা, ঝুঁকি ভাতা, দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ, পদোন্নতিসহ বেশকিছু কল্যাণমূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
গণমাধ্যম কর্মীরা তাঁর তৃপ্তি বা অতৃপ্তির বিষয়ে প্রশ্ন করলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “অতৃপ্তি হচ্ছে জনআকাঙ্ক্ষা অনুসারে হয়তো দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই। তেমন তৃপ্তিও আমার নেই। তবে ‘কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়’- সমাজের সর্বস্তরে এই বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এটাই আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।”
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এ কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের ওপর কেউ চাপ প্রয়োগ করার সুযোগ পাননি। আমরা যা করেছি আইন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করেই করেছি। তবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ আমরা করিনি। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির বিষয়টি আমরা সব সময় বিবেচনা করেছি। আমি আজও বলব দুর্নীতি নির্মূলে সামাজিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। একাত্তরে যেমন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি, তেমনি দুর্নীতি দমনে ঠিক একইভাবে সমাজের সব স্তরের মানুষের সমন্বিত আন্দোলনের প্রয়োজন রয়েছে।’