ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জনসমাগম থেকে করোনা আরো বেশি ছড়িয়ে পড়বে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ধর্মীয় ইমামদের আরো সচেতন হতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লকডাউনের মধ্যে একটি জানাজায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ সমাগম থেকে করোনাভাইরাস আরো বেশি ছড়িয়ে পড়বে। এটা কোনোভাবে ঠিক হয়নি। এ ধরনের সমাগম বন্ধে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯১ জনের মৃত্যু হলো। এ ছাড়া নতুন করে আরো ৩১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট দুই হাজার ৪৫৬ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৬৩৪ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে ৩১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া আরো সাতজন মারা গেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত মোট ২৩ হাজার ৮২৫ জনের করোনার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস ঢাকা এবং দু-একটি জেলায় শুরু হলেও নারায়ণগঞ্জ থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে চলমান লকডাউনের মধ্যেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় লাখো মানুষের লোকসমাগমে ব্যবস্থা নিতে না পারায় পুলিশের এক এএসপি (সরাইল সার্কেল) মাসুদ রানা ও সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহদাৎ হোসেন টিটুকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা এ কথা জানান। এর আগে গতকাল শনিবার রাতে শুধু সরাইল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করার কথা জানান তিনি।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান। এনটিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি শিহাব উদ্দিন বিপুকে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার।
এ ছাড়া এ ঘটনায় সরাইল, আশুগঞ্জ ও সদর উপজেলার আটটি গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ওই সব গ্রামের লোকজন ১৪ দিন ঘর থেকে বের হতে পারবেন না।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্ব উপেক্ষা করে এই জানাজায় বিশাল জমায়েতের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় সরাইলের জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসায় এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মহামারি করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণের পাশাপাশি মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। মাদ্রাসার প্রান্তর ছাড়িয়ে জানাজার সারি দীর্ঘ হয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিস্তীর্ণ এলাকা পর্যন্ত। ইমামতি করেন জুবায়ের আহমদ আনসারীর ছেলে হাফেজ মাওলানা আসাদ উল্লাহ।
শুক্রবার বিকেল পৌনে ৬টায় জেলা শহরের মার্কাসপাড়ায় নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত আলেম জুবায়ের আহমদ আনসারী। জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা গ্রামে তাঁর বাড়ি।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা থেকে গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। জেলায় এ পর্যন্ত দুজন এ ভাইরাসে মারা গেছেন। রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৬ জন।