ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা গেলেন, প্রতিবাদ করলেন, চলে এলেন
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্থা ও অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত আজকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছেন সাংবাদিকরা। সংবাদ সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে বয়কটের ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতারা।
আজ সকাল ১১টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তার আগে আজ সকালেই এই সংবাদ সম্মেলন বয়কটের ডাক দেয় সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)।
পরে সংবাদ সম্মেলনের নির্ধারিত সময়ে সাংবাদিকরা সেখানে হাজির হন। আসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগেই বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বলেন, ‘গতকাল সোমবার রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় আমরা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সচিবালয়ে ছিলাম। এ ব্যাপারে জানতে বারবার সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। তাঁর সহকারীকে বলেছি। সচিবের দরজার সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলেছি। তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। কোনো কথার জবাবও দেননি। এভাবে বারবার আমাদেরকে অপমানিত করেছেন। সুতরাং আমরা এই সংবাদ সম্মেলন বয়কট করছি।’
পরবর্তী কর্মসূচি বিএসআরএফ কার্যালয় থেকে সাংবাদিক নেতারা ঘোষণা দেবেন বলে জানান শামীম আহমেদ।
এরপরই সাংবাদিকরা সবাই একসঙ্গে সেখান থেকে বের হয়ে যান। এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা ‘কথা শোনার জন্য’ সবার কাছে অনুরোধ করেন। তবে সাংবাদিকেরা তা না শুনে সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন।
পরে সাংবাদিকেরা সচিবালয়ের গণমাধ্যমকেন্দ্রে অবস্থান নেন। সেখানে তাঁরা বৈঠক করেন।
এর আগে সরকারি নথিপত্র চুরির অভিযোগে গতকাল সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে যান রোজিনা ইসলাম। এ সময় তিনি মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নেন এবং মোবাইল ফোনে ছবি তোলেন। পরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাঁর শরীর তল্লাশি করে সেইসব নথিপত্র উদ্ধার করেন।
এই অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে কয়েক ঘণ্টা সচিবালয়ে আটক রেখে সন্ধ্যার পর শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী, তাঁর কর্মস্থলের সহকর্মী আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে রোজিনার মুক্তি দাবি করেন।
এদিকে অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের মামলায় রোজিনা ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তাঁর জামিনের ব্যাপারে পরে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আজ মঙ্গলবার রোজিনাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। অপরদিকে রোজিনার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।