ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে ৮৪৬ কোটি টাকার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ৮৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পসহ সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চলতি অর্থবছরের পঞ্চম একনেক সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সভায় যোগ দেন। একনেকের অন্য সদস্যরা রাজধানীর এনইসি ভবন থেকে যুক্ত ছিলেন বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সভা শেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা আজকের একনেক সভায় চারটি মন্ত্রণালয়ের সাত প্রকল্প উত্থাপন করি এবং সব প্রকল্পই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট আনুমানিক ব্যয় তিন হাজার ৪৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে দুই হাজার ৬১৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে এবং ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা বিদেশি ঋণ বা অনুদান ও ২৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বিশ্ব ব্যাংকের অনুদান থেকে আসবে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণে’র কথা বলতে গিয়ে এম এ মান্নান বলেন, ‘রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য রাস্তাটি উন্নত করছি…। এটি বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের জন্যই একটি লাভজনক প্রকল্প।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। উভয় দেশই ভারতের ত্রিপুরা এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে নাফ নদের মধ্য দিয়ে যুক্ত সড়কটি ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। তিনি আরো জানান, ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার প্রকল্পটিতে সরকার দেবে ২৬৪ কোটি ৩৩ লাখ এবং ভারতীয় ঋণ ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এম এ মান্নান আরো জানান, এর মাধ্যমে রামগড়ে সীমান্তহাট উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে কারণ প্রকল্পটি সম্ভাব্য সীমান্তের বাজারকে আরো উন্নত করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প থেকে দুই কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেস্ট হাউস নির্মাণের প্রস্তাব বাতিল করে দেন। এর পরিবর্তে তিনি সারা দেশে যেখানে রেস্ট হাউস নির্মাণ প্রয়োজন তার জন্য একটি পৃথক প্রকল্প নেওয়া জরুরি বলে মত দেন।
‘সিপিডির সঙ্গে বাহাসে যাব না’
‘জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন একটি রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এ বক্তব্য নিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে বাহাসে যাবেন না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘উনারা গবেষক মানুষ, গবেষণা করেন। আমি তাদের সঙ্গে বাহাস বা কোনো ধরনের তর্কে যাব না। এটা তর্কেরও বিষয় নয়।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছে। বিবিএসের এ জরিপকে ‘অবাস্তব ও রাজনৈতিক’ বলে উল্লেখ করেছে সিপিডি।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিবিএস আমাদের নির্ভরযোগ্য সংস্থা। তারা দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে কাজ করছে। তাদের কাজের ওপর আমাদের আস্থা আছে। তারা যে তথ্য দিয়েছে, সেটার ওপর আমরা সম্পূর্ণভাবে আস্থাশীল। এটাই যথাযথ।’
সভায় অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী অংশ নেন।