ভারতের সিদ্ধান্ত জটিলতায় দেশে ফিরতে পারছে না বাংলাদেশিরা

Looks like you've blocked notifications!
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। ছবি : এনটিভি

ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত জটিলতায় সেই দেশে আটকেপড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীরা দেশে ফিরতে পারছে না। এর ফলে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত রোববার থেকে তারা দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের হিলিতে অবস্থান করছে।

সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১২ মার্চ ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের গত রোববার থেকে হিলি চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রী দেশে প্রবেশ করতে পারেনি।

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যালয় সূত্র জানায়, কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন থেকে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা অনাপত্তিপত্র) নিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টযাত্রীরা ফিরতে পারবেন এবং দেশে প্রবেশের পর এখানে তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

তবে গত রোববার থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৩০ মে পর্যন্ত লকডাউন শুরু হয়েছে। তাই লকডাউনের কারণে সেখানে ট্রেনসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী বাহন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের দেশে ফিরতে দুর্ভোগে পড়তে হবে।

আজ দুপুরে ভারতের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্রী শিপ্রা রায় সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশিদের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি আছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনো অনুমতি আমরা এখনো পর্যন্ত পাইনি। গত রোববার থেকে রাজ্যে লকডাউন চলছে। হয়তো এ কারণেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

ওসি আরও জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চারজন বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রী কলকাতা থেকে আমাদের ইমিগ্রেশনে আসে। আমরা তাদের বলেছি, অনুমতি নেই। এরপর তারা কলকাতায় ফিরে গেছে। এদের মধ্যে দুজন রোগী ছিল।

এদিকে, জানতে চাইলে দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেকেন্দার আলী জানান, দেশে ফিরে আসার জন্য ভারতে আটকেপড়া ২৩ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রী কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন থেকে গত রোববার ও সোমবার এনওসি গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভারতের হিলি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি পেলেও রাজ্য সরকারের কোনো অনুমতি পায়নি জানিয়ে অনেককে ফিরে দিচ্ছে। আবার অনেক যাত্রী এখনও সেখানকার ইমিগ্রেশন এলাকায় অবস্থান করছে। এ কারণে আটকেপড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীরা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরতে পারছে না। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি বিষয়টি দু-এক দিনের মধ্যে সুরাহা হয়ে যাবে।

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর এ আলম জানান, ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীরা যেদিনই দেশে আসুক না কেন তাদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। এদের মধ্যে যারা অসুস্থ তাদের আমরা দিনাজপুর বা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে পাঠাব। এ জন্য স্থানীয় তিনটি আবাসিক হোটেলে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গত ১২ মে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে ফিরতে বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাশাপাশি দিনাজপুরের হিলি, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনাসমজিদ স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে ভারতে চিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনে গিয়ে আটকেপড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীদের দেশে ফিরে আসতে গত রোববার (১৬ মে) থেকে দিনাজপুরের হিলি চেকপোস্ট চালু করা হয়েছে। কিন্তু আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশি কোনো যাত্রী দেশে প্রবেশ করেনি।

এদিকে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এখন পর্যন্ত স্বভাবিক রয়েছে। ভারতীয় ট্রাকগুলো আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে বন্দরে প্রবেশের পর জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ট্রাকের চালককেও স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। চালকরা যাতে বন্দরের বাইরে যেতে না পারে সে জন্য পানামা পোর্ট কর্তৃপক্ষ নজরদারি বাড়িয়েছে। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে দেশে দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে।