ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান দুই মানবাধিকার সংস্থার

Looks like you've blocked notifications!
নোয়াখালীর ভাসনচর। ফাইল ছবি

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজারের শিবির থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে একই দিনে বিবৃতি দিয়েছে দুই মানবাধিকার সংস্থা—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

দুটি মানবাধিকার সংস্থাই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি  স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা এ খবর জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত একটি স্বচ্ছ স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শরণার্থীদের সবকিছু জানিয়ে-বুঝিয়ে এবং দ্বীপটিতে যাওয়া-আসার অনুমতি সাপেক্ষে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সেইসঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বান অনুযায়ী, একটি স্বাধীন কারিগরি ও সুরক্ষা বিষয়ক মূল্যায়ন পরিচালনা করা উচিত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্র্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘মানবিক পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সম্মতি বা সবুজ সংকেত ছাড়া শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর না করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের কাছে যে ওয়াদা করেছিল তা থেকে সরে আসছে।’

ব্র্র্র্যাড অ্যাডামস আরো বলেন, ‘সরকার যদি ভাসানচরে বসবাসের উপযোগিতা নিয়ে নিশ্চিত হয়ে থাকে, তাহলে তা স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং জাতিসংঘের কারিগরি মূল্যায়নকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত স্থানান্তর শুরু করা উচিত নয়।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দূত রেনসজি টেরিঙ্ক বলেন, ভাসানচরে জাতিসংঘের পূর্ণ কারিগরি ও মানবিক মিশন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত স্থানান্তর নিয়ে কোনো কথা বলবে না ইইউ।

যদিও বাংলাদেশ সরকার বলছে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শরণার্থীদের ইচ্ছেতেই হবে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছে যে এমন অন্তত ১২টি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তারা কথা বলেছে যারা জানিয়েছে, তাদের নাম ভাসানচরে স্থানান্তর করার তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে স্থানান্তর হতে চায় না বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছে। স্থানান্তরের তালিকায় থাকা কিছু শরণার্থী জোর করে স্থানান্তরিত হওয়ার ভয়ে পালিয়েছে বলেও দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

আবার কয়েকজন শরণার্থীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে সংস্থাটি বিবৃতিতে জানায়, তারা ভাসানচরে স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হয়েছে কারণ মাঝি এবং ক্যাম্প-ইন-চার্জরা তাদের বলেছে যে, সেখানে মাছ ধরা কিংবা কৃষিকাজ করে জীবিকা উপাজর্নের পথ বেছে নিতে পারবে। সেইসঙ্গে তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সন্তানদের শিক্ষালাভের সুযোগ থাকবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ভাসানচরে এরই মধ্যে যে তিন শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, তাদের অবস্থা নাজুক। তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা নেই এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দাতা দেশগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার অবস্থান নেওয়া উচিত।’
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হামাদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর অনতিবিলম্বে বন্ধ করে সেখানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনা উচিত।’

‘দুর্গম ওই দ্বীপটিতে যেখানে মানবাধিকার গ্রুপ ও সাংবাদিকদের আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে এত বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী স্থানান্তর করা হলে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতির স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ করাটাও উদ্বেগের মুখে পড়বে।’

চরটিতে স্থানান্তর শুরুর আগে বাংলাদেশ সরকারের সেখানে জাতিসংঘ মানবাধিকার গোষ্ঠী ও সংস্থাগুলোকে বসবাসের উপযোগিতার বিষয়টি মূল্যায়নের সুযোগ দেওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গতকাল (২ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে জাতিসংঘ অবগত থাকলেও স্থানান্তরের প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি।

ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে সীমিত তথ্য আছে বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিবৃতিতে গুরুত্বারোপ করা হয় যে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর যাতে স্বেচ্ছায় হয় সে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের নিশ্চিত করা উচিত।