ভুয়া আদেশ তৈরিতে জড়িতদের খুঁজতে বললেন হাইকোর্ট

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের বদলির আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট, ভুয়া আদেশ তৈরি এবং গণমাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে জড়িতদের বের করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ নির্দেশ দেন।
দুদকের এক কর্মকর্তার বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের ভুয়া আদেশ বানিয়ে অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করার ঘটনায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। রাকিব হাসান নামে আরও এক আইনজীবী এ সময় যুক্ত ছিলেন। এ সময় রিট আবেদনকারী আদালতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আদেশে হাইকোর্ট সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সাংবাদিকদের সতর্ক করে দিচ্ছি। ভবিষ্যতে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। রিপোর্ট প্রকাশের আগে যেকোনো তথ্যের সত্যতা ভাল করে যাচাই-বাছাই করে নেবেন। পাশাপাশি রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীকে সতর্ক করে দিয়ে আদালত বলেছেন, আপনাকে বার কাউন্সিলে পাঠালাম না। তবে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক থাকবেন।
বদলির আদেশ চ্যালেঞ্জ করে অন্য ব্যক্তির রিট আবেদন দাখিল ও হাইকোর্টের ভুয়া আদেশ বানিয়ে পত্রিকা অফিসে সরবরাহ করার সঙ্গে দুদক কর্মকর্তা নিজেই সম্পৃক্ত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আদালত।
আদালত বলেন, সবকিছুর সুবিধাভোগী দুদক কর্মকর্তা। এসবের পেছনে ওই কর্মকর্তা জড়িত বলেই মনে হচ্ছে। তার কর্মকাণ্ড ভাল না। অন্যকে দিয়ে হয়তো এসব করানো হচ্ছে। তার উদ্দেশ্যসাধন করতেই এত কিছু করা হয়েছে। তাই কমিশনকে এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, কমিশন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ওই কর্মকর্তার বিষয়ে গত ১০ আগস্ট তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে গত ১৬ জুন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ে বদলি করা হয়। এই বদলির আদেশ চ্যালেঞ্জ করে নিজেকে কক্সবাজারের চকরিয়ার একটি মানবাধিকার সংগঠনের সভাপতি দাবি করে জনৈক শাহিদুল ইসলাম লিটন হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। এই রিট আবেদনটি হাইকোর্ট কার্যতালিকা থেকে বাদ দিলেও এ নিয়ে গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের বিভিন্ন দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীফ উদ্দিনের বদলির আদেশ দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। কোনো কোনো পত্রিকায় লেখা হয়, শরীফ উদ্দিনকে স্বপদে বহাল রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে রিট আবেদনটি আবারও কার্যতালিকাভুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফা শুনানিকালে আদেশ জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের সামনে আসে।