ভৈরবে অভিভাবকদের ৮০ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা শিক্ষক
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হাজী আসমত গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক এ কে এম কামরুজ্জামান খান ব্যবসার কথা বলে এলাকার ২০-২২ জন অভিভাবকের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। রমজানের ঈদের পর থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক এ কে এম কামরুজ্জামান খান নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে পাওনাদারদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা।
এদিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক এ কে এম কামরুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক লাখ ১৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ভৈরব থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। গত ১২ মে অধ্যক্ষ আহমেদ আলী এই জিডি করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক কামরুজ্জামান খানের বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামে। ২০১৭ সাল থেকে তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন চণ্ডীবের দক্ষিণপাড়া এলাকায় বিয়ে করে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তার একটি বইয়ের লাইব্রেরি আছে ওই এলাকায়। শিক্ষক হিসেবে তার বেশ সুখ্যাতিও রয়েছে।
পাওনাদারদের অভিযোগ, শিক্ষক কামরুজ্জামান খান তাদের কাছ থেকে বই ও ইলেকট্রিক পণ্য কেনাবেচা করে মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এদের মাঝে শিক্ষক মতিউর রহমানের কাছ থেকে নিয়েছেন ১৪ লাখ, নারী উদ্যোক্তা সাথী আক্তারের কাছ থেকে দুই লাখ, তিতাস গ্যাসের কর্মচারী জায়েদুল ইসলাম রবিনের কাছ থেকে সাত লাখ ২০ হাজার, শিক্ষক আল-আমিনের কাছ থেকে তিন লাখ, ওই স্কুলের এক কর্মচারীর দুই লাখ, শিক্ষক সাইফুল হক হৃদয়ের কাছ থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার, আরেক শিক্ষক মো. সোলায়মানের তিন লাখ, এক ছাত্রীর অভিভাবক সাদিকুন্নাহার বেবির দুই লাখ, আরেক অভিভাবক সাদিয়ার দুই লাখ, স্থানীয় বাসিন্দা দেলুয়ার হোসেন জুয়েলের কাছ থেকে তিন লাখ, হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে পাঁচ লাখ, রইছ উদ্দিনের কাছ থেকে সাত লাখ, স্কুলের ক্যাশ থেকে এক লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এ ছাড়া আরও সাত-আটজন ব্যক্তি ৩০ লাখ টাকার মতো পাবেন বলে অভিযোগকারীদের দাবি। ভুক্তভোগী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়, যারা তাকে টাকা দিয়েছেন তারা একজনের খবর আরেকজন জানেন না। কাউকে বলেছেন ঢাকা থেকে ৪০ শতাংশ কমিশনে বই কিনে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছেন। ওই কমিশনের অর্ধেক ২০ শতাংশ মুনাফার টাকা যারা টাকা দিয়েছেন তাদের দেওয়া হবে। আবার ঢাকা থেকে ইলেকট্রিক পণ্য কিনে ভৈরবে বিক্রি করে মুনাফার অংশ তাদের দেওয়া হবে।
দুই বছর ধরে ওই শিক্ষক অনেককে মাসে মাসে প্রতি লাখে দুই-তিন হাজার টাকা করে মুনাফা দিয়ে বিশ্বাস সৃষ্টি করেন। এ কারণে তারা লোভে পড়ে তার কাছে টাকা লগ্নি করেন।
শিক্ষক মতিউর রহমান জানান, তাঁর মেয়ের জামাই বিদেশ থাকেন। তার পাঠানো টাকা ব্যাংকে আমানত রাখলে লাভ কম। বেশি লাভের আশায় কামরুজ্জামানকে ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েছিলেন। টাকার বিপরীতে তার কাছে ওই প্রতারক শিক্ষকের ব্যাংক হিসেবের ১৪ লাখ টাকার চেক রয়েছে।
অনলাইন ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা সাথী আক্তার জানান, লাভ দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন কামরুজ্জামান। কয়েক মাস লাভ ঠিকমতো দিয়েছেন। এখন লাপাত্তা হওয়ায় তিনি তার মূল টাকা ফেরৎ পাওয়া নিয়েই চিন্তায় আছেন।
তিতাস গ্যাসের কর্মচারী জায়েদুল ইসলাম রবিন বলেন, আমি তাকে সাত লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। মাঝেমধ্যে তিনি ধার নিয়ে যথাসময়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন। সেই বিশ্বাস থেকে টাকা দিলাম ব্যবসার মুনাফা পেতে। এখন নিখোঁজ রয়েছেন তিনি।
হাজী আসমত গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আহমেদ আলী জানান, তার ব্যবহার, পড়াশোনায় মনে হয়নি তিনি প্রতারক। এত লোকের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবেন আমরা কখনো ভাবতে পারিনি। তিনি স্কুলের এক লাখ ১৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করায় আমরা থানায় একটি জিডি করেছি।
শিক্ষক কামরুজ্জামানের স্ত্রী আলেয়া বেগমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোকজন আমার স্বামীর কাছে ৮০ লাখ টাকা পাবেন, এ খবর আমি জানতাম না। এখন অনেক পাওনাদার আমার বাসায় এসে আমাকে চাপ সৃষ্টি করছেন। গত ঈদের পর তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল যাওয়ার কথা বলে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই আমার। এ ব্যাপারে আমি থানায় একটি নিখোঁজের জিডি করেছি।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, কামরুজ্জামানের বিষয়ে থানায় দুটি জিডি হয়েছে। একটি করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এবং অপরটি তার স্ত্রী। অনেক পাওনাদার থানায় জিডি করতে এসেছিলেন। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করতে তাদের আমি পরামর্শ দিয়েছি।