ভৈরবে আমনের বাম্পার ফলনেও মন ভালো নেই কৃষকের

Looks like you've blocked notifications!

মাঠের পর মাঠ সোনালি পাকা ধানে ভরপুর। হেমন্তের মৃদু বাতাসে পাকা ধানের শীষ দুলছে। যেদিকে চোখ যায়, এমন মনোমুগ্ধকর আর নয়নাভিরাম দৃশ্যই চোখে পড়ে ভৈরবের মাঠে মাঠে। আবেগী মন অভিভূত হবে সেই দৃশ্য দেখে। কিন্তু যারা দেহের ঘাম ঝরিয়ে সোনালি এসব ধানের ফলন ফলিয়েছেন তাদের চোখে মুগ্ধতা নেই। সুখের লেশমাত্র আবেশও নেই মনে।

তাদের চোখে আছে কেবল ক্রমাগত লোকসানের আতঙ্ক আর হতাশা। ঘামযুক্ত কপালে দুশ্চিন্তার বলীরেখা। কারণ এক মণ ধান ফলনে যেখানে তাদের খরচ পড়ে যায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, সেখানে ধানের ভরমৌসুমে দর দাঁড়ায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অথচ ধান রোপা এবং কাটার একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি গুনতে হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। দুই বেলা তাদের খাবারের বাড়তি চাপ তো থাকেই। এমন পরিস্থিতিতে তারা মৌসুমের শুরুতে ধানের বাজারদর এক হাজার টাকা দাবি করছেন।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। তারপরও মন ভালো নেই কৃষকের। তাদের দাবি, গত কয়েক বছরের অব্যাহত লোকসানে তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ধারা চলমান থাকলে এক সময় তারা ধান আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রামের কৃষক আলীমুদ্দিন জানান, তিনি গত বছর সাত বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করে লোকসান গুনছেন। এবারও সাত বিঘা জমির আমনের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। কিন্তু সঠিক মূল্য না পেলে বিপদে পড়ে যাবেন। কারণ গেত মৌসুমের ঋণের দায় থেকে মুক্ত হতে পারেনি এখনো।

একই এলাকার কৃষক শফিউল্লাহ জানান, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। ঋণের দায়ে ধান কাটার সঙ্গে  সঙ্গেই বিক্রি করতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছরের লোকসানের কারণে নতুন ধান ঘরে তুলেই বিক্রির জন্য ছুটতে হয়। মৌসুমের শুরুতে কম দামে ধান বিক্রি করে সারা বছর বেশি দামে চাল কিনে খান। এতে তাঁর ঋণের দায়ে শুধুই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ছনছাড়া গ্রামের কৃষক কামাল মিয়া, খুরশিদ মিয়া ও আবদুল হক মিয়া জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে। ধানের বাজার দরটা মণপ্রতি ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা পেলে তারা লাভবান হবেন। নয়তো বা গত কয়েক বছরের মতো এবারও লোকসানে পড়তে হবে।

ভৈরব উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ভৈরবে দুই হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, আবাদ হয়েছে দুই হাজার ২৫০ হেক্টর। আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। এতে কৃষকরাও বেশ খুশি।

বর্তমানে ভৈরবে ধানের বাজার দর ৭০০ টাকা উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম শরীফ খান জানিয়েছেন, এই দরে ধান বিক্রি করলে কৃষক লোকসানে পড়বে না। তবে ধানের দর ৫০০ টাকার নিচে হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে কৃষি জানান, চলতি মৌসুমে ভৈরবে সরকারি খাদ্য গুদামে ২৬ টাকা কেজি দরে ৩৩৬ মেট্রিকটন ধান কেনার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে