ভৈরবে দুর্বৃত্তদের তাণ্ডব, ৬০টি বাড়িঘরে ভাঙচুর-লুট 

Looks like you've blocked notifications!
ভৈরবে দুর্বৃত্তদের হামলায় ভাঙা ঘরবাড়ি। ছবি : এনটিভি

কাচা, আধাপাকা আর পাকা দালানগুলোতে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর অবশিষ্ট নেই আর কিছুই। বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখলে মনে হতে পারে এটি রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে শক্তিশালী বোমার আঘাতে ধুলিসাৎ হওয়া কোনো নগরের দৃশ্য। অথবা সদ্য হয়ে যাওয়া তুরস্ক-সিরিয়ার শক্তিশালী ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তুপ। কিন্তু এটি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের বধূনগর গ্রামে প্রতিহিংসার জেরে দুর্বৃত্তদের করা লুটপাট ও ভাঙচুরের চিত্র।

জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি তুচ্ছ ঘটনায় বধূনগরের ইসলামপুর গ্রামে কালা মিয়া নামে এক ব্যক্তি খুন হন। এ ঘটনায় কালা মিয়ার ছেলে বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠায়। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বধূনগর গ্রামের লোকজন বাড়ি-ঘর খালি রেখে আত্মগোপন করে। এই সুযোগে কিছু দুর্বৃত্ত খালি থাকা ৫০ থেকে ৬০টি পরিবারের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। রাতের অন্ধকারে আধাপাকা ঘর-দুয়ার এমনকি একতলা-দোতলা ভবনও ভেঙে দরজা-জানালা-কাঠ, রড-ইট খুলে নিয়ে যায়।

ওই গ্রামের ভুক্তভোগী বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ মিয়া জানান, লুটেরারা তাঁর ঘরে থাকা স্বর্ণ, নগদ টাকাসহ সব আসবাবপত্র নিয়ে গেছে। সারা জীবনের রোজগারে তৈরি করা একটি একতলা দালান, একটি চৌচালা টিনের ঘর ভেঙে কাঠ, টিন, রড, দরজা-জানালা সব নিয়ে গেছে। তিনি এখন রাস্তার ফকির। এই অবস্থায়ও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

একই অভিযোগ করে বধূনগর গ্রামের শিক্ষক ফাহমিদা আক্তার জানান, তার ঘর ভেঙে সব আসবাবপত্র-মালামাল নিয়ে গেছে। ঘরের কোনোকিছুই অবশিষ্ট রাখেনি দুর্বৃত্তরা। অথচ খুন হওয়া ব্যক্তির সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

ফাহমিদা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘পূর্বশত্রুতার বদলা নিতে শ্রীনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান উসমান গণির লোকজন আমার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর আর লুটপাট করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি করছি।’

গ্রামের আবুল মিয়া জানান, তার পাকা দালান ভেঙে ইট-রডসহ দরজা-জানালা খুলে নিয়েছে। মাঠের ফসলি জমি স্বল্প মূল্যে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন মাথার ওপরের ছাদ আর পেটের ভাত কোনোটাই নেই।

এদিকে নিহত কালা মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই ভাঙচুরের সঙ্গে তারা জড়িত নন। এগুলো তাদের কিছু আত্মীয় ও অন্য গ্রামের লোকজন করেছে।

কালা মিয়ার বড় বোন শেওলা বেগম বলেন, ‘যাদের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, তারা টাকা দিয়ে সেগুলো আবার তৈরি করে নিতে পারবে। কিন্তু আমার ভাইকে তো আর ফিরে পাবো না।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষে কালা মিয়া নিহত হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরবর্তীতে তার পরিবারের সদস্যদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। তাদের মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু এই খুনের ঘটনায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ একটি লুটপাটের মামলা নিয়েছে। এ মামলায় কিছু লোক উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসেছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর আছে।’