ভৈরবে ৮ মাসেরও অধিক ভেটেরিনারি সার্জন নেই

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আট মাসেরও বেশি সময় ধরে উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন পদটি শূন্য। গত বছরের ১২ নভেম্বর বদলিজনিত তৎকালীন ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান অন্যত্র চলে গেলে গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি খালি হয়। এরপর শূন্যপদটি পূরণে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় থেকে সাড়া পাচ্ছেন না বলে দাবি জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের।

স্থানীয় কৃষক ও খামারিদের অভিযোগ, ভেটেরিনারি সার্জন বা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক না থাকায় এখানকার পোল্ট্রিশিল্পের পর এবার গবাদিপশুতে ধস নামার উপক্রম হয়েছে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে তাদের চোখের সামনে তাদের মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। তারা অবিলম্বে উপজেলা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকের শূন্যপদটি পূরণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন লিটন জানান, চলতি বছরের শুরুতে ভৈরব উপজেলার দেড় শতাধিক পোলট্রি খামার বার্ডফ্লু, রানিক্ষেত ও গাম্বুরি রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু উপজেলা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক না থাকায় বিনা চিকিৎসায় ওইসব খামারের হাজার হাজার মুরগি মরে যায়। এতে কয়েকশ খামারি লোকসানের মুখে পড়ে। কৃষির পাশাপাশি এ উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতি প্রাণিসম্পদ নির্ভর উল্লেখ করে দ্রুত এই শূন্যপদটি পূরণে পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে পোলট্রিশিল্পে ধসের পর এবার গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এখানকার কৃষক ও খামারিরা। ইদানীং এখানকার কয়েকশ গবাদিপশু লাম্পিং স্কিন ডিজিজ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকটি পশুর মৃত্যু হওয়ায় তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ করে যারা পশুর মৌসুমি খামার গড়ে তুলেছে, তারা লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কায় দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে।

উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের খামারি আমির হোসেন ও আগানগর ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের খামারি মনির হোসেন জানান, ঈদের আগে তাদের খামারে এই ভাইরাস দেখা দেওয়ায় তাঁরা খুব চিন্তিত। তবে প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে তারা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বদলিজনিত কারণে গত বছরের ১২ নভেম্বর থেকে ভৈরবে ভেটেরিনারি সার্জন নেই স্বীকার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও এখনো ভেটেরিনারি সার্জন পাওয়া যায়নি। তিনি এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ভেটেরিনারি সার্জন না থাকায় আমরা সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাসেবা দিতে পারছি না।’

এখানকার কৃষক ও খামারিরা খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে আছে উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভেটেরিনারি সার্জন না থাকায় আমরা কৃষক ও খামারিদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে পারছি না।’ তিনি পদটি পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম জানান, ভৈরবের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে ভেটেরিনারি সার্জন পদটি শূন্য থাকা হতাশা ও দুঃখজনক। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।