মধ্যরাতে গরুশূন্য রাজধানীর পশুর হাট
ক্রেতা নেই, বিক্রি নেই- এমন চিত্র ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর প্রায় সব পশুর হাটের। সন্ধ্যার পর এক নিমিষেই পাল্টে যেতে থাকে চিত্র। পশুর হাটগুলোতে বাড়তে থাকে ক্রেতা। মধ্যরাতে হঠাৎ গরুশূন্য হয়ে পড়ে হাটগুলো।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে বাজারগুলোতে ক্রেতা আছে কিন্তু গরু নেই। হঠাৎ এমন চিত্র দেখে বিস্মিত ক্রেতারা। এ হাট থেকে ওই হাটে ছোটাছুটি করে হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেক ক্রেতা। গরু না পেয়ে অনেকের কোরবানি দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়,ক্রেতারা ঘুরছেন কিন্তু গরু নেই। ব্যাপারিরা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ কেউ নতুন করে আবার গরু বাজারে আনার চেষ্টা করছেন।
শনির আখড়া বাজারে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটারব্যাপী হাজার হাজার গরু ছিল। সন্ধ্যার পর বাড়তে থাকে গরুর কেনাবেচা। মধ্যরাতে কয়েক হাজার গরু শেষ! যারা শেষদিন কোরবানির পশু কেনার আশায় ছিলেন তারা বিপাকে পড়েছেন।
গরু কিনতে আসা সৈয়দ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গরু কিনে রাখতে সমস্যা হবে। এ কারণে শুক্রবার গরু কিনতে চেয়েছিলাম। আগের দিনও দেখে গেলাম হাজার হাজার গরু। আজ সকালে এসে দেখি পুরো শনির আখড়া গরু শূন্য। এমন দৃশ্য ঢাকা শহরে কখনো দেখিনি। হাটে হাতে গোনা ১০-১২টি গরু আছে, তার দামও চড়া।’
শনির আখড়ার গরুর হাটের ইজারাদার জাফর হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক বছরের মধ্যে এমন গরুর সংকট কখনোই দেখা যায়নি। গতকাল রাত ১০টার পর থেকে হাটে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। রাত ৩টা নাগাদ হাটের অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে যায়। গরুর সংকট থাকায় দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। প্রথমদিকে বিক্রি না হওয়ায় গরু নতুন করে বাজারে প্রবেশ করেনি। এ কারণে বিক্রি হওয়ার পর সংকট তৈরি হয়েছে। সকাল থেকেই হাটে গরু না থাকায় আমরা আশপাশের যারা গরুর ব্যাপারি আছেন,তাদের এই বিষয় জানাই। এরপর থেকে কিছু কিছু গরু আবার হাটে আসা শুরু হয়েছে। যে পরিমাণ ক্রেতা হাটে আছে,সেই তুলনায় গরুর সংখ্যা একেবারেই কম।’
রাজধানীর শাহজাহানপুরে পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা গরু কিনতে ঘুরাফেরা করছে, কিন্তু গরু নেই। এমন দৃশ্য শুধু শনির আখড়া, শাহজাহানপুর, কমলাপুর নয় রাজধানীর হাজারীবাগ, গাবতলীসহ প্রতিটি হাটের এমন চিত্র। দুই দিন আগেও যেখানে গরুর ব্যাপারিরা অবিক্রিত থেকে যাওয়ার শঙ্কায় সামান্য লাভে কিংবা সমান সমান দামে,এমনকি লোকসানে গরু বিক্রি করেছেন সেখানে আজ প্রতিটি গরুর দাম হাঁকছেন দ্বিগুণেরও বেশি। চাহিদার তুলনায় গরুর সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই পশুর দাম এমন চড়া হয়ে গেছে।
পশুরহাটের ব্যাপারি আলম সরকার এনটিভি অনলাইনকে জানান, দুই ট্রাক গরু জামালপুর থেকে নিয়ে এসেছি। প্রথমদিন বিক্রি হচ্ছিল না। এ কারণে দুশ্চিন্তায় থেকে কেনা দামের চেয়ে কমমূল্যে তিনটি গরু বিক্রি করেছি। গতকাল সন্ধ্যার পর চিত্র পাল্টে যায়। রাতেই দুই ট্রাক গরু শেষ। ব্যবসাও ভালো হয়েছে।’
আলম সরকার জানান, গতকাল সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ করে হাটগুলোতে ক্রেতাদের ঢল নামে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাটগুলো গরুশূন্য হয়ে যায়।
মাত্র দুই দিন আগেও হাটভর্তি গরু ছিল। ব্যাপারিদের চোখে-মুখে ছিল দুশ্চিন্তার ছাপ। কিন্তু আজ চিত্র ভিন্ন। আজ ক্রেতাদের চোখে-মুখে চিন্তার ভাজ আর ব্যাপারিদের মুখে হাসি। এ সময় হাটে জীর্ণশীর্ণ কিছু সংখ্যক গরু আসতে দেখা যায়। সেই গরুগুলোও মুহূর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়।