মন্দা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক
অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণে জরুরি বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর অভিঘাত থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় নতুনভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থা চলার কারণে সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ অর্থনৈতিক মন্দা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারসহ অর্থনীতির কোনো খাতে যেন না পড়ে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, দেশের পুঁজিবাজারে ছোট-বড় কোনো বিনিয়োগকারীর স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সে বিষয়ে ‘সজাগ দৃষ্টি রাখার’ নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। সেই সাথে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে জোরালো আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের ‘দিক-নির্দেশনা’ দেন।
এরআগে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য ও ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সাশ্রয়ী পরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি নিয়ে আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে’ উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘বৈঠকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ডিটেইল আলোচনা হয়েছে। কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রিকে কতগুলো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত এবং কম্প্রিহেনসিভ ব্যবস্থা নিয়ে সবার কাছে তুলে ধরার জন্য। বিশেষ করে এই যে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে বা সাপ্লাই কমে যাচ্ছে, এই জিনিসগুলো কীভাবে হ্যান্ডেল করতে পারব; কোন জায়গায় রেস্ট্রিকশন দিলে ভালো হবে বা ওপেন করলে ভালো হবে। এগুলো দু-তিন দিনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে জানাতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশেরই সমস্যা নয়। বর্তমানে ডলারের সংকট ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি সমন্বিত ও সাশ্রয়ী পরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
যেসব পণ্য আমদানি না করলেও কোনো সমস্যা নেই, সেগুলোতে নতুন করে করারোপ করা যায় কি না, সে বিষয়ে সুপারিশ করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। কয়েক দিনের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে হবে।
সচিব বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। করোনার টিকা প্রদানের ক্ষেত্রেও আমাদের সাফল্য অনেক বেশি। এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করার জন্য বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে প্রায় এক কোটি বিলিয়ন ঋণ দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে।’