মরার আগে মাকে নিতে চাননি সন্তানরা, বাধ্য করল পুলিশ

Looks like you've blocked notifications!
পুলিশের চাপে আম্বিয়া খাতুনকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাড়িতে নিয়ে যান ছেলে। ছবি : সংগৃহীত

আম্বিয়া খাতুনের বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের নিজের বাড়িতে থাকতেন। অসুস্থ ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে আম্বিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁরই গর্ভজাত ছেলেমেয়েরা। শেষে ঠাঁই হয় মিরপুরের পাইকপাড়ার একটি বৃদ্ধাশ্রমে। এরপরও ঘুমের ঘোরে ছেলেকে ডেকে ওঠেন, ‘আলাউদ্দিন, আলাউদ্দিন!’

পাইকপাড়ার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের নির্বাহী মিলটন সমাদ্দারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আম্বিয়ার নাতনি গোপনে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে রেখে আসেন আম্বিয়া খাতুনকে। সে সময় নাতনি প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তা মিলটন সমাদ্দারকে বলেছিলেন, ‘রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে এখানে নিয়ে এসেছি।’

গত রমজান মাস শুরুর আগে আম্বিয়া খাতুনের ছেলে আলাউদ্দিনসহ পরিবারের লোকজন গিয়েছিল চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে। তখন মিলটন সমাদ্দারকে ছেলে আলাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘পরের বার এসে মাকে বাড়িতে নিয়ে যাব।’

সে সময় মিলটন জানতে পারেন আম্বিয়ার পরিবারের কথা। কিন্তু ছেলে আলাউদ্দিন কথা রাখেননি। এমনকি পরে আর কখনো খোঁজও নেয়নি তাঁর পরিবার।

বৃদ্ধাশ্রমে আম্বিয়া খাতুনের পাশে কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি এবিএম মশিউর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

চলতি বছরের নভেম্বরের শেষের দিকে আম্বিয়া খাতুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বারবার দেখতে চাচ্ছিলেন সন্তানসহ পরিবারের লোকজনকে। ঘুমের মধ্যেও তিনি তাঁর ছেলে আলাউদ্দিনের নাম বলছিলেন বারবার। এরপর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মিলটন সমাদ্দার যোগাযোগ করেন আলাউদ্দিনের সঙ্গে। পরে আলাউদ্দিন ও তাঁর দুই ভাইবোন গিয়েছিলেন ওই কেয়ারে। এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা বলেছেন মিলটন সমাদ্দার।

মায়ের সঙ্গে দেখা করা শেষে মিলটন সমাদ্দার আম্বিয়ার ছেলে আলাউদ্দিনকে বলেছিলেন, “আপনার মা হয়তো মারা যাবে। শেষ কয়েকটা দিন বাড়িতে নিয়ে রেখে চিকিৎসা করান। ঘুমের ঘোরেও আপনার মা ‘আলাউদ্দিন, আলাউদ্দিন’ বলে ওঠেন বারবার। সন্তান হিসেবে আপনারও মায়ের প্রতি দায়িত্ব আছে।”

এসব কথা শুনেও মন গলেনি আলাউদ্দিনসহ আম্বিয়ার সন্তানদের। তাঁরা কোনোভাবেই তাঁদের মাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাননি। তখন আলাউদ্দিন মিলটন সমাদ্দারকে বলেছিলেন, ‘মা মরে গেলে জানাবেন, লাশ নিয়ে যাব। আমরা দাফন-কাফন সব করব।’

তখন মিলটন সমাদ্দার আলাউদ্দিনসহ তাঁর পরিবারকে লাশ হওয়ার আগেই মাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা মাকে রেখেই আবার বাড়িতে চলে যান। চলতি সপ্তাহে আম্বিয়ার শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হলে আলাউদ্দিনের স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন মিলটন। অনুরোধ করেন মাকে নিয়ে যেতে। কথাবার্তার একপর্যায়ে আলাউদ্দিনের স্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে মিলটনকে বলেন, ‘বেশি কথা বলবেন না। আর যদি আমাকে ফোন করেন, তাহলে আপনার নামে আমার শাশুড়িকে অপহরণের দায়ে মামলা করব।’

পুলিশের চাপে আম্বিয়া খাতুনকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাড়িতে নিয়ে যান ছেলে। ছবি : সংগৃহীত

এ অবস্থায় বেশ বিপাকে পড়েন মিলটন সমাদ্দার। এ ঘটনার জেরে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। পরে একটি অনলাইন পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করা হলে বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে খোঁজ নিয়ে পুলিশ বৃদ্ধাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে তার পরিবারকে চাপ দেয়। পরে পরিবার আম্বিয়া বেগমকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার থেকে বাড়িতে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিলটন সমাদ্দার বলেন, ‘ঘটনাটি পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মীর সোহেল রানার নজরে আসে। পরে তিনি কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম মশিউর রহমানকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কথা বলেন আমার সঙ্গেও। পরে ওসি গত শনিবার বৃদ্ধ আম্বিয়ার সন্তানদের খুঁজে বের করেন। সে সময় মাকে বাসায় নিয়ে যেতে আলাউদ্দিনের প্রতি চাপ সৃষ্টি করেন মশিউর। সর্বশেষ রোববার দুপুরে আম্বিয়ার ছেলেমেয়েরা তাঁকে কামরাঙ্গীরচরের নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। সোহেল স্যার চেয়েছিলেন বলে এটা সম্ভব হয়েছে।’