‘মলত্যাগ করায়’ শিশুকে হত্যা, ছয় মাস পর মা ও সৎ বাবা গ্রেপ্তার
আড়াই বছরের ছোট্ট শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস। একদিন সকালে দিকে জান্নাতুল, গর্ভধারিণী আকলিমা খাতুন ও সৎ বাবা বাবুল মিয়া একসঙ্গে খেতে বসেছিলেন। এমন সময় জান্নাতুল মলত্যাগ করে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে বাবুল জান্নাতুলকে গলা চেপে ধরে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করেন। একপর্যায়ে জান্নাতুল মাথায় আঘাত পেয়ে উঁচু বারান্দা থেকে নিচে পড়ে যায়। তার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। তখন জান্নাতুলকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাবুলের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কোনাবাড়ী গ্রামে। কিন্তু বাবুল ও আকলিমা দিনের বেলায় জান্নাতুলের লাশ নিয়ে কোনাবাড়ী গ্রামে ফিরেনি। তারা পাশের গ্রাম বালিয়াপাড়ায় বাবুলের বোনের বাড়ি চলে যায়। রাতের বেলায় লাশটি গৌরীপুর রেলস্টেশন থেকে একটু দূরে বাড়িওয়ালাপাড়া দুই নম্বর রেল গেটের ঝোপের মধ্যে ফেলে বাবুল আর আকলিমা চলে যায় গাজীপুর।
এই ঘটনাটি চলতি বছরের ১৮ মার্চের। ২০১৭ সালে আকলিমা আক্তারকে বিয়ে করেন বাবুল। এটি বাবুলের তৃতীয় বিয়ে এবং আকলিমার দ্বিতীয় বিয়ে। আকলিমার আগের পক্ষের দুই মেয়ে। এর মধ্যে বড় মেয়েকে তিনি বাপের বাড়ি রেখে আসেন এবং ছোট মেয়ে জান্নাতুলকে নিয়ে আসেন।
ঘটনার প্রায় সাড়ে ছয় মাসের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার বাবুল ও আকলিমাকে গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক আবুল কাশেম। তিনি আজ শুক্রবার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১৯ মার্চ ঝোপের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ এবং বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা হয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্তে হত্যার কথা বলা হয়। গত ১৭ আগস্ট গৌরীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল মিয়া বাদী হয়ে শিশুটির বাবা-মাকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।’
পিবিআই গত ২৭ সেপ্টেম্বর মামলাটির দায়ভার গ্রহণ করে জানিয়ে আবুল কাশেম বলেন, এর তিন দিনের মাথায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা কোনাবাড়ী গ্রামের লোকজনের কাছ থেকেই বিষয়টি জানতে পারি। পরে এ ব্যাপারে আরো খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হই। বাবুল ও আকলিমা এ ব্যাপারে আজ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’
পিবিআই কর্মকর্তা আরো বলেন, বাবুল শুরু থেকেই জান্নাতুলকে পছন্দ করতেন না। তিনি প্রায়ই শিশুটিকে মারধর করতেন।