মহাসংকটে পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হব না : দুদক চেয়ারম্যান

Looks like you've blocked notifications!
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, করোনাকালের এই মহাসংকটেও আমরা দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হব না।

দুদকের ষোড়শ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার এক আলোচনা সভায় দুদক চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভা আত্মজিজ্ঞাসা বা আত্মসমালোচনার একটি প্লাটফর্ম। এমন সময় এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে, যখন শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন বা বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বই মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। এই মহাসংকটকালেও দেশের দুষ্টুচক্রের কালো হাত থেমে নেই। সে কারণেই মাস্ক কেলেঙ্কারি, করোনা টেস্ট জালিয়াতি, ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ, চিকিৎসা জালিয়াতির মতো ঘটনা আমাদের সামনে এসেছে। আমরাও দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করি। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই আমাদের ৭০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনজন প্রতিশ্রুতিশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হারিয়েছি। তারপরও দুর্নীতিপরায়নদের সুখকর সময় পার করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের কাজটি ধন্যবাদহীন।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলাম, কমিশন সব সময় গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। কারণ গঠনমূলক সমালোচনাই কর্ম প্রক্রিয়াকে শাণিত করে, সঠিক পথ দেখায়। সবাই সব কিছু জানে না। তাই অন্য কেউ যদি ভালো পথ দেখায় তা গ্রহণ করতে আমাদের আপত্তি নাই। আমরা সমালোচনার প্রতিউত্তর দেই না বরং তা গ্রহণ করি। নিজেদের পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সমাজে কেউই দুর্নীতি চায় না। সমাজের কতিপয় ব্যক্তি দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের সংখ্যা সত্যিই নগণ্য। তাই সমাজের কাছে আমাদের অঙ্গীকার থাকতে হবে। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে সব সময় বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের সবার প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থাকতে হবে। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী মানে অপরাধ বা অপরাধীর সঙ্গে আপস নয়। সব ধরনের ভয়-ভীতি, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে শেষ দিন পর্যন্ত জনগণের কল্যাণে দুর্নীতি প্রশমন, দমন, প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করব, এটাই হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’

আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষিত হয়েও যারা দুর্নীতি করছেন, তারা জঘন্য অমানবিক অপরাধ করছেন। তাদের মানবিক গুণাবলি নেই বরং পাশবিক গুণাবলি রয়েছে। সবাই সন্তানদের জজ-ব্যারিস্টার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি বড় কর্মকর্তা বানাতে চান। এটা ভালো কথা। তবে সন্তানদের মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিও একই সঙ্গে বাবা-মাকে করতে হবে।’

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, লকডাউনকালে যখন সব অফিস-আদালত বন্ধ ছিল, তখনও দুদক মামলা করেছে, আসামি গ্রেপ্তার করেছে। সব কার্যক্রম ডিজিটালি সম্পন্ন করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির কারণেই দুদকের ৯০ শতাংশেরও বেশি নথি ই-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, গোয়েন্দা অনুবিভাগের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আক্তার হোসেন, যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুস সায়াদাত প্রমুখ।

ভার্চুয়াল এ আলোচনা সভায় দুদকের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।