মাছ ধরা বন্ধ : ঋণের বোঝার চিন্তায় জেলেদের কপালে ভাঁজ
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আজ থেকে পদ্মা ও মেঘনায় দুই মাসব্যাপী বন্ধ মাছ ধরা। নিষেধাজ্ঞার এ দুই মাসে দুই নদীতে ফেলা যাবে না কোনো প্রকার জাল। অথচ জেলেদের কাঁধে ঝুলছে ঋণের বোঝা। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় তাই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। প্রতি বছর এমন জটিলতা এড়াতে দাবি করেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ঋণের কিস্তি বন্ধের।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অক্টোবর মাসে ‘মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম’ ও মার্চ-এপ্রিলে দুই মাস ‘জাটকা নিধন রক্ষা কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করে আসছে সরকার। এ সময় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নিষেধাজ্ঞার এ সময় জেলেদের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। নিবন্ধিত জেলেদের দেওয়া হয় চাল।
জেলেদের অভিযোগ, এ সময় ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিকল্প কর্মসংস্থান ব্যবস্থা না থাকায় আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ শিকারে নামতে বাধ্য হন তাঁরা। এতে অনেককেই পড়তে হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের জেল-জরিমানায়। ভোগান্তির শিকারও হতে হয় অনেককে।
চাঁদপুরে ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে আছেন। মৎস্য অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন ও জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির নিষেধাজ্ঞায় তাঁরা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলতে পারবেন না। জেলার মতলব উপজেলার উত্তরের ষাটনল থেকে হামচরের চরভৈরবির ৭০ কিলোমিটার এলাকায় থাকবে প্রশাসনের কড়া নজরদারি। এসব বিষয়ে জেলেদের সচেতন করতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা।
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে ইউনুস, ওমর ফারুক হারুণ ও মো. আলী শাহাদাত জানান, দুই মাসের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে বিকল্প কর্মস্থান না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় তাঁদের। একদিকে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ, অন্যদিকে সংসারে অভাব-অনটন, সব মিলিয়ে প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞার সময় দুশ্চিন্তায় কাটে জেলেদের দিন।
ওই এলাকার জেলেদের অভিযোগ, অনেক কষ্টে দিন পার হলেও তাঁদের এলাকার অধিকাংশরাই নদীতে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু, বহিরাগত কিছু জেলে এসে নদীতে মাছ ধরে। এর খেশারত দিতে হয় এলাকার জেলেদের।
জেলেরা জানান, এলাকার নিবন্ধিত জেলেদের চাল দিয়ে সহায়তা করে সরকার। কিন্তু, এই চালের সহায়তা তাঁদের জন্য যতেষ্ট না।
জেলেদের দাবি, ‘যাঁরা সরকারের আইন মানেন, তাঁদের জন্য নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে বিকল্প আয়ের সুবিধা দিতে হবে।’ জেলেরা বলেন, ‘সহায়তা স্বরূপ চাল নয়, বিকল্প কাজের সুযোগ চাই।’
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজাহিদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বৃহত্তর স্বার্থে মাছ ধরা বন্ধ থাকছে। যেসব জেলে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে, তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জাটকা রক্ষায় নৌ পুলিশের কয়েকটি টিম সার্বক্ষণিক টহল দেবে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘মাছ ধরা বন্ধে নদীতে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যৌথ সমন্বয়ে কাজ চলবে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদেরকে সহায়তায় চাল বিতরণ অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ইলিশ রক্ষায় মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন বন্ধেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত দুমাস জাটকা রক্ষায় ড্রেজার বন্ধ থাকবে। আমাদের পক্ষে ড্রেজার মালিকদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’