মাদক নির্মূলের ঘোষণা দেওয়া যুবককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা
সমাজ থেকে ইয়াবা নির্মূলের ঘোষণা দেওয়ার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ীর হাতেই’ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার যুবক মোছাদ্দেকুর রহমান (৩৭) নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার বারদোনা আদর্শপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় বলে জানান সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির।
এ ঘটনায় ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত কিশোর গ্যাং লিডার সোহেল পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সোহেলকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নেমেছে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর।
নিহত মোছাদ্দেকুর রহমান আদর্শপাড়ার মাহবুবুর রহমানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজারের মক্কা হোটেলের পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বারদোনা মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
জানা গেছে, এলাকায় মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোগী হয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করে বারদোনা মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন মোসাদ্দেকুর রহমান। ওই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর তিনি এলাকায় এসে এ কমিটির কার্যকলাপ আরো জোরদার করে তোলেন। এরই ধারাবাহিকায় গত শনিবার বিকেলে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের বাড়িতে কমিটির লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
পরে বৈঠকের ছবি দিয়ে মোছাদ্দেকুর তাঁর ফেসবুক আইডিতে লেখেন, প্রতিটি সমাজ থেকে ইয়াবা নির্মূল করার পাশপাশি ক্রমান্বয়ে ১৬ নম্বর সদর ইউনিয়নকে ইয়াবামুক্ত করতে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব হারুনুর রশিদ, পরানেরপাড়ার কৃতি সন্তান লুৎফর রহমান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অভিভাবক সেলিম উদ্দিন এবং চিববাড়ীর ডাক্তার পাড়ার হেলাল উদ্দিনকে নিয়ে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি। পরবর্তী সময়ে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রতিনিধিদের নিয়ে কার্যকলাপ আরো সম্প্রসারিত করা হবে।
এর মধ্যে আজ সোমবার বিকেলে আসরের নামাজ পরে মোছাদ্দেকুর এলাকার লিচু গাছতলার দিকে হাঁটতে যান। এ সময় সোহেলের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সোহেল মোছাদ্দেকের নাম ধরে গালিগালাজ করে। মোছাদ্দেক গালিগালাজ কেন করা হচ্ছে জানতে চাইলে তাদের মধ্য বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। একপর্যায়ে সোহেল অতর্কিতভাবে মোছাদ্দেককে ছুরিকাঘাত করলে মোছাদ্দেক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় মোছাদ্দেকের চিৎকারে ঘটনাস্থলের পাশেই খেলতে থাকা বেশ কয়েকজন এগিয়ে এলে তাদের মধ্যে মোছাদ্দেকের ছোটভাই ফয়সালকেও (৩৫) ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায় সোহেল বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
পরে স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য দুজনকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠান। পরে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোছাদ্দেককে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘মোছাদ্দেক মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আমার মাদকবিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার করার জন্য গত শনিবার আসরের নামাজের পর একটি বৈঠক করি। মাদকবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণেই মোছাদ্দেককে হত্যা করা হয়েছে বলে আমি মনে করছি।’