মাদারীপুরে ব্যবসায়ীর স্বর্ণ ছিনতাইচেষ্টা, গ্রেপ্তার ৩

Looks like you've blocked notifications!
মাদারীপুরের শিবচরে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্বর্ণ ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিন যুবক। ছবি : এনটিভি

আইনের লোক পরিচয়ে মাদারীপুরের শিবচরে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্বর্ণ ছিনতাইচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ সময়  হাতেনাতে দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল রোববার বিকেলে শিবচরের সূর্যনগর এলাকায় ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেস হাইওয়েতে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত দুই ছিনতাইকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওই ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে আপন দুই ভাই এবং তাদের চাচাতো, খালাতো দুই ভাইসহ পাঁচজন জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিনেশ পাল জানান, ছিনতাই ঘটনা চলাকালে কিশোর নামের ওই কর্মচারী তার বাসায় বসেই খাবার খাচ্ছিলেন এবং মোবাইল ফোনে ঘটনা তদারকি করছিলেন।

শিবচর পৌর বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিনেশ পাল চার ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে হলমার্ক করানোর জন্য একটি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে চড়ে গতকাল বিকেলে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেলটি ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেস হাইওয়ের শিবচরের সূর্যনগর বাজার পার হওয়ার পর দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন এসে ব্যবসায়ীর মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করেন এবং তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে অবৈধ মালামাল আছে বলে দেহ তল্লাশি করে। এ সময় তারা ব্যবসায়ী দিনেশকে তাদের মোটরসাইকেলে তোলার চেষ্টা করেন এবং তার মোটরসাইকেলচালককে মারধর করেন। এ সময় তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে প্রতিরোধ করলে সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ী দিনেশ পাল সূর্যনগর বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের খবর দেন। সূর্যনগর বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে রওনা দিয়ে দত্তপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন।

ব্যবসায়ীরা গিয়ে ছিনতাইকারী আচ করতে পেরে স্থানীয়দের নিয়ে ঘেরাও করে রেখে তাদের মারধর করতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে রিফাত সিকদার (২০) ও রাজিব সিকদারকে (২৬) ব্যবসায়ী ও স্থানীয়র কাছ থেকে উদ্ধার করে। তবে মোটরসাইকেল দুটি নিয়ে অপর দুই ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়।

গতকাল রাতে ছিনতাইকারীদের শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেনের সামনে উপস্থিত করলে বের হয়ে আসে ছিনতাই ঘটনার সব তথ্য।

রিফাত ও রাজিব শিবচর থানার ওসির কাছে স্বীকার করেন এ ঘটনার মূল হোতা ও তথ্যদাতা দিনেশ পালের দোকানের কর্মচারী কিশোর সরকার (২০)। দিনেশ পাল দোকান থেকে বের হওয়ার পরই কিশোর মোবাইল ফোনে গ্রেপ্তারকৃত রাজিব সিকদারের ছোট ভাই রনি সিকদারকে তা জানান। রনি তার বড় ভাই রাজিব, চাচাতো ভাই রিফাত ও খালাতো ভাই জহুরুল মুন্সীকে দিয়ে ছিনতাইচেষ্টা করেন। পরে রাতেই পুলিশ কিশোর সরকারকে গ্রেপ্তার করে। কিশোর ছয় বছর ধরে এই দোকানে কর্মরত। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃত কর্মচারী কিশোরের বাড়ি শিবচরের দক্ষিণ বহেরাতলা ইউনিয়নের নমোকান্দিতে। অপর গ্রেপ্তারকৃত দুই ছিনতাইকারী রাজিব সিকদার ও রিফাত সিকদার চাচাতো ভাই। তাদের বাড়ি দত্তপাড়া ইউনিয়নের চরবাচামারা গ্রামে।

এ বিষয়ে শিবচর থানার ওসি বলেন, গতকাল বিকেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিনেশ পাল ফরিদপুরে যাওয়ার পথে দত্তপাড়া ইউনিয়নের একটি ফাকা জায়গায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। আরও দুই ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের পরিচয়ও আমরা জানতে পেরেছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ছিনতাই ঘটনার পরিকল্পনাকারী আসলে দিনেশ পালের কর্মচারী কিশোর। তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এ ঘটনায় দিনেশ পাল বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন আসামিকে আজ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।