মাদারীপুরে শ্রমিক লীগনেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে অবরোধ
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় নির্বাচনি সহিংসতায় শ্রমিক লীগের নেতা আবু বকর ফকির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী আজ রোববার বেলা ১১টায় উপজেলার পাঁচ্চর এলাকায় ঢাকা-খুলনা অবরোধ করে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি করে।
মানববন্ধনে ব্যানার-ফ্যাস্টুন হাতে নিয়ে অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় আধা ঘণ্টারও বেশি সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
নিহত আবু বকর ফকির (৪৬) শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের ডাইয়ারচর এলাকার মৃত আবুল খালেক ফকিরের ছেলে। তিনি মাদবরেরচর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন।
সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য নির্বাচিত ইউপি সদস্য আজিজুল সরদারের সমর্থক ছিলেন আবু বকর।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে পরাজয় জেনেই আবু বকরকে ইউসুফ সরদার ও তার সমর্থকেরা মিলে খুন করে। হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এই ঘটনার সাতদিন কেটে গেলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না বলেও অভিযোগ করা হয়। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে ব্যানার হাতে অংশ নেন নিহত আবু বকরের মা মেহেরজান বেগম। ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাজানরে ইউসুফ, মঞ্জুরা জোট কইরা মাইরা ফালাইছে। যারা আমার বুকের ধনরে খুন করছে আমি মরার আগে ওগের যেন বিচার হয়। আল্লাহ তুমি ওগের বিচার করো।’
নিহতের স্ত্রী আখি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হইছে। তিনি মারা যাওয়ার আগে আমাকে মঞ্জু, তার ভাইয়ের ছেলে মনির সরদারের কথাই বারবার বলছে। ওই মনিরই আমার স্বামীরে মাইরা ফালাইছে। আমার দুই পোলারে যারা এতিম করছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ মাদবর, মাদবরেরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাদবর, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফারুক সরদার, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, মাদবরেরচর ইউপির সদ্য নির্বাচিত সদস্য আজিজুল সরদার প্রমুখ।
মামলার এজাহার সূত্র মতে, ২১ জুন অনুষ্ঠিত হওয়া মাদবরেরচর ইউপি নির্বাচনের আগের দিন রাতে চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী ইউসুফ সরদারের সমর্থকরা প্রচারণায় যান। এ সময় ইউসুফ ভোটারদের টাকা বিনিময়ে ভোট কিনছে এমন অভিযোগ ওঠে। এ খবর অপর সদস্যপ্রার্থী আজিজুল সরদার জানতে পারেন। আবু বকর আজিজুলের সমর্থক হওয়ায় ওই রাতেই তিনি সতেররশি এলাকায় যান।
এ সময় দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ইউসুফ সরদারের সমর্থকরা আবু বকরকে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। আবু বকরকে প্রথমে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় নির্বাচনের দিন রাতেই নিহতের ভাই কামাল ফকির বাদী হয়ে শিবচর থানায় একটি মামলা করে। এতে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচ জনকে আসামি করা হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, ‘বিচারের দাবিতে আসা বিক্ষুব্ধরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ আসামি ধরার ব্যাপারে আশ্বস্ত করায় তাঁরা মহাসড়কে অবরোধ তুলে নেয়। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে আসামি ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’