মানবিক র‌্যাব কর্মকর্তা, পৃথিবীর আলো দেখল সচিন

Looks like you've blocked notifications!
মৌভীবাজারের সেই মানবিক র‌্যাব কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ও নবজাতকসহ মা। ছবি : এনটিভি

‘রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টা। আমার পিসির প্রসব বেদনা ওঠে। রক্ত ভাঙা শুরু হয়। কিন্তু বাচ্চা প্রসব হইতেছিল না। তাই সবাই বলেন হসপিটালে নেওয়াই লাগবে। হসপিটালে নেওয়ার জন্য এত রাতে গাড়ি কোথায় পাব? আমরা সবাই টেনশন করছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি পাই নাই। পরিচিত অনেক সিএনজি ড্রাইভারকে অনুরোধ করি, কোনো লাভ হয়নি। তারা বলে, এত রাতে যাইতে পারবে না।

এমন সময় আমার প্রিয় বড় ভাই রাজু দেব লিটন (উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে) আমাকে শ্রীমঙ্গল র‌্যাব বাহিনীর কমন্ডার, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম স্যারের নম্বর দেন। তিনি নাকি মানুষকে সাহায্য করেন। বড় ভাইয়ের কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করি নাই। তবুও নিরুপায় হয়ে মোবাইলে কল দিলাম। ওনি বললেন, দুই মিনিটের মধ্যে রওনা হইতেছেন। বিশ্বাস করি নাই। পরে দেখি ওনি ঠিক সময়মতো চলে এসেছেন। আমরা আশ্চর্য হইলাম।

পিসির হেঁটে যাওয়ার অবস্থা ছিল না। উনি মুখে কিছু না বলে পিসিকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে তোলেন। হাসপাতালে পৌঁছার পর উনি পিসিকে কোলে নিয়ে আবার অপারেশন রুমে দিয়া আসছেন। আমরা আশ্চর্য হলাম, এই রকম মানুষও কি পৃথিবীতে আছে? আমার পিসি এক ছেলে জন্ম দিয়েছে। পিসি ও তাঁর ছেলে দুজনই সুস্থ আছে। সবার আশীর্বাদ চাই, ভগবান সাহায্যকারীকে পুরস্কার দিক।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে এই কথাগুলো লিখেছেন নির্মল পাল নামের একজন। তিনি ওই প্রসূতি গৃহবধূর বড় ভাইয়ের ছেলে। তাঁর বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার শহরতলীর দক্ষিণ উত্তরসুর এলাকায়। তাঁর এই স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই এই ঘটনা বিশ্বাস করতে পারেনি।

মৌলভীবাজারে অসুস্থ এক গৃহবধূকে নিজে কোলে করে গাড়িতে উঠাচ্ছেন র‌্যাব কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন শামীম । ছবি : এনটিভি

করোনাভাইরাস মহামারিতে সারা দেশে যখন যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন শ্রীমঙ্গল র‌্যাব-৯ ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি মো. শামীম আনোয়ার হোসেন ঘোষণা দেন মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এলাকায় কোনো গর্ভবতী মায়ের প্রসবকালীন জটিলতা নিয়ে যানবাহনের সমস্যা হলে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করার জন্য। তাহলে তিনি নিজ দায়িত্বে সেই গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করবেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই মানবতার খাতিরে এগিয়ে আসেন এএসপি শামীম আনোয়ার।

পরের দিন দূপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা হাসপাতাল থেকে সুস্থ অবস্থায় মা ও নবজাতক সন্তান বাড়ি ফিরেন। নবজাতক এই শিশুটির নাম রাখা হয় সচিন চন্দ্র দাস। র‌্যাব কামান্ডার শামীম আনোয়ার গতকাল শুক্রবার বিকেলে শ্রীমঙ্গল উপজেলার দক্ষিণ উত্তরসুর গ্রামের গৃহবধূ শিল্পী রানী পাল ও তাঁর শিশু সন্তান সচিনের খোঁজ-খবর নিতে যান।

এ বিষয়ে র‌্যাব কামান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষ এখন ঘরবন্দি ও কর্মহীন। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা নিজেদের উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবিক এ কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রায় হাজারখানেক মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে র‌্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প থেকে।’

র‌্যাবের সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ৩৪তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। তাঁর গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন উত্তর বড়বিল গ্রামে।