মানিকগঞ্জে তারেক-মুনীর স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা, মানববন্ধন
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরের নবম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে স্মৃতিফলকে ফুলেল শ্রদ্ধা, মানববন্ধন, আলোচনাসভা ও বৃক্ষরোপণ করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব, বারসিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বানিয়াজুরী বারাঠা উত্তরণ সংঘ, তারেক মাসুদ মোমোরিয়াল ট্রাস্ট, প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ বিভিন্ন সংগঠন এসব কর্মসূচি পালন করে।
এ সময় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এরপর মহাসড়কের পাশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও পরিবেশবিদ অ্যাডভোকেট দিপক কুমার ঘোষ।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর চলচ্চিত্র সংসদ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইকবাল হোসেন কচি, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিপন, সাংবাদিক সমিতির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডি এম নাসিম, বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, সাংবাদিক পারভেজ বাবুল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আদালতের রায়ে ঘাতক বাসচালকের শাস্তি হয়েছে। কিছুদিন আগে সেই চালক মারা গেছেন। তবে এখনো ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক নিরাপদ হয়নি, থেমে নেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল। ঢাকা- আরিচা মহাসড়ক নিরাপদসহ ঢাকা-মানিকগঞ্জ রেললাইনের দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধন শেষে সড়কের আশপাশে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রোপণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট একটি চলচ্চিত্রের জন্য শুটিং স্পট পরিদর্শন শেষে মাইক্রোবাসে ঢাকায় ফিরছিলেন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং সাংবাদিক আশফাক মুনীরসহ (মিশুক মুনীর) আরো কয়েকজন।
পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় পৌঁছালে পাটুরিয়াগামী ‘চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স’নামের একটি বাসের সঙ্গে তাদের (তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর) বহনকারী মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
এতে ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর, প্রডাকশন সহকারী ওয়াসিম, জামাল এবং মাইক্রোবাস চালক মুস্তাফিজুর রহমানসহ পাঁচজন মারা যান। সে সময় আরো আহত হয়েছিলেন তারেক মাসুদের সহধর্মিণী ক্যাথরিন মাসুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিল্পী ঢালী আল মামুন ও তাঁর স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম জলি।
প্রয়াত তারেক মাসুদ মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘মুক্তি গানে’র একজন প্রশংসিত পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘মাটির ময়না’।
অপরদিকে, গণমাধ্যম জগতে মিশুক মুনীর নামেই বেশ পরিচিতি থাকলেও তাঁর আরেক নাম আশফাক মুনীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষকও ছিলেন তিনি।
তবে মিশুক মুনীর মূলত পরিচিত ছিলেন একজন দক্ষ ক্যামেরাপার্সন হিসেবে। দেশের প্রথম বেসরকারি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন প্রতিষ্ঠার সময় তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
প্রয়াত মিশুক মুনীর (আশফাক মুনীর) শহীদ বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর সন্তান।