‘মানুষের পাশে দাঁড়ানোই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাজ’

Looks like you've blocked notifications!
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাহাউদ্দিন নাছিম। ছবি : সাইফুল সুমন

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৬১ সালের ১১ নভেম্বর মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার নাম এ এন মহিউদ্দিন আহমেদ ও মায়ের নাম নূরজাহান বেগম। তিনি মাদারীপুর সরকারি নাজিমুদ্দিন কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই বাহাউদ্দিন নাছিম রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি প্রথমে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, এরপর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ওই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্স্য হন। নাছিম বেশ কিছুদিন কৃষক লীগের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক হন, পরে সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। বাহাউদ্দিন নাছিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য  হিসেবে নির্বাচিত হন।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশের কৃষিবিদদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন’-এর দুবার মহাসচিব ও দুবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আগামীকাল ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলন  উপলক্ষে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এনটিভি অনলাইনকে। 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ফখরুল শাহীন।  

এনটিভি অনলাইন : কেমন আছেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?

এনটিভি অনলাইন : জি, ভালো।

এনটিভি অনলাইন : স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আপনি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সংগঠনটির বয়স এখন ২৫ বছর। কেমন লাগছে আপনার?

বাহাউদ্দিন নাছিম : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম একটি সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ সংগঠনের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হবে, নতুন নেতৃত্ব আসবে। নবীন-প্রবীণদের একটা মিলনমেলা ঘটবে। সব মিলিয়ে ভালো ।  

এনটিভি অনলাইন : স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বলবেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তার আগেও এটির কার্যক্রম চলত। সেই পাকিস্তান আমলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী। পাকিস্তান আমলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শ নিয়ে কর্মীরা ‘স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী’ নামে কাজ করতেন। ওই সময় এর প্রথম কার্যক্রম শুরু করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, পরবর্তী পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নেতৃত্ব দেন প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাক ভাই।

এনটিভি অনলাইন : রাজনৈতিক সংগঠনের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ বলতে কী বোঝায়?

বাহাউদ্দিন নাছিম : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাজই হচ্ছে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। আর তারই সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ। মানুষের কল্যাণে মানুষের সেবা করা, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে, আওয়ামী লীগের যেকোনো সভা-সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ স্বেচ্ছাশ্রম এবং বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াবে, এটাই তাদের কাজ।

এনটিভি অনলাইন : প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। ওই সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ কতটুকু তৎপর?

বাহাউদ্দিন নাছিম : স্বেচ্ছাসেবক লীগ সব সময়ই  তৃণমূল থেকে শুরু করে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সর্বশেষ বুলবুলেও (ঘূর্ণিঝড়) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রস্তুত ছিল।

এনটিভি অনলাইন : এ পর্যন্ত কোন কোন দুর্যোগে কাজ করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ?

বাহাউদ্দিন নাছিম : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশের প্রতিটি দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা কাজ করছেন। সেটা তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। ত্রাণ দেওয়া, পুনর্বাসনে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

এনটিভি অনলাইন : দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রশিক্ষণ নেয়। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক লীগের অবস্থান কী?

বাহাউদ্দিন নাছিম : ট্রেনিং বলতে যেকোনো দুর্যোগের সময় স্থানীয় পর্যায় থেকে সবখানে মিলেমিশে কাজ করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকে। 

এনটিভি অনলাইন : যে লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে?

বাহাউদ্দিন নাছিম : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে সৃষ্টি হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ আওয়ামী লীগেরই একটি সহযোগী সংগঠন, যা জনগণের সেবার মানসিকতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। তার দেখভাল করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক দলের ভালো-মন্দ থাকে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো কাজ করার।

এনটিভি অনলাইন : স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা কী?

বাহাউদ্দিন নাছিম : নেত্রীর কারামুক্তির আন্দোলন থেকে শুরু করে অতীতে সব কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করেছি। আগামী দিনে দল ও জাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে স্বেচ্ছাসেবক লীগ পাশে থাকবে। স্বাধীনতার পূর্বে যে জাতির কল্যাণে কাজ করেছে, আগামী দিনেও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।

এনটিভি অনলাইন : নেতৃত্ব নির্বাচনে কোন কোন বিষয় বেশি গুরুত্ব দেবেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : সৎ, সাহসী, কোনো ধরনের বিতর্ক নেই, তারাই আসবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে তারাই আসবে, যারা একসময়ে ছাত্রলীগ করেছে, ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, ছাত্রলীগের নেতা ছিল তাদের মাঝ থেকে যেন নেতৃত্ব হারিয়ে না যায়। যাদের যোগ্যতা আছে, দুঃসময়ে সংগঠন করেছে, ছাত্রলীগের সঙ্গে থেকে নেত্রীর সব কর্মসূচি পালনে ভূমিকা রেখেছে—নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে।

এনটিভি অনলাইন : আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। ওই সময়ের কথা যদি বলতেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রামে নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ওপর হামলা হয়েছে, তখনও আমি নেত্রীর পাশে ছিলাম। খুব কাছ থেকে দেখেছি, চট্টলার বীরেরা কীভাবে সেদিন নেত্রীকে প্রাণ বাঁচিয়েছে, নিজের জীবন বাজি রেখে নেত্রীকে রক্ষা করেছে। তখন আমি নেত্রীর সঙ্গে ছিলাম। ঠিক ২১ আগস্ট এ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যখন রাষ্ট্রীয় মদদে হামলা করে, ওই হামলায় আইভি রহমানসহ অনেকে শহীদ হন। সেদিনও অস্থায়ী ট্রাকে আমি ছিলাম নেত্রীর পেছনে, খুব কাছ থেকে মানুষের আর্তনাদগুলো দেখেছি। রক্তে ভেসে গেছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ।

এনটিভি অনলাইন : ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আগামী দিনের পরিকল্পনা আছে কি?

বাহাউদ্দিন নাছিম : ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষ করে এসে তারা কোথাও জায়গা পায় না। এ জন্যই আমরা শুরু করেছিলাম। প্রথম দিকে অনেক সংকট ছিল। স্বেচ্ছাসেবক লীগটা আবার কী—এমন প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। বর্তমানে সংগঠনটি খুব শক্তিশালী হয়েছে, সেটা বলব না। এর একটা ভালো ইমেজ কিন্তু রয়েছে। দু-একজনের ব্যক্তিগত কারণে সামান্য ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তবে সংগঠন কিন্তু কলুষিত হয়নি। অন্য সংগঠন যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সমালোচিত হয়েছে, টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে—সেটা স্বেচ্ছাসেবক লীগ হয়নি।

এনটিভি অনলাইন : নিয়মিত সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিশেষ কোনো চেষ্টা আছে কিনা?

বাহাউদ্দিন নাছিম : এটা তো শুরু হয়েছে। এই যে সম্মেলন, এটা তো তারই মেসেজ। আওয়ামী লীগ টানা তিনবার সময়মতো সম্মেলন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এবার চতুর্থবারের মতো সম্পন্ন হচ্ছে। এটা মূল দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তার দায়িত্ব পালন করছে। অন্যরাও করবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল কী করছে, তাদের ইতিহাস কী? যদিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্যদের তুলনা করা যাবে না, আমিও চাই না। এতে আমার দলের ইজ্জত বাড়বে না; কমবে। তারপরও ঐতিহ্যবাহী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এটা করছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচিত হয়। আওয়ামী লীগ দলের ভেতরে যতটুকু গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে, এ রকম আরেকটা দল বাংলাদেশে নেই।

এনটিভি অনলাইন : আগামীতে সময়মতো সম্মেলনের পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?

বাহাউদ্দিন নাছিম : সময়মতো সম্মেলন হওয়া উচিত। সময়মতো সম্মেলন হলে নতুন নেতা নির্বাচিত হয়, সংগঠন গতিশীল হয়। যারা নেতা হতে চায়, তারা নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করবে। এটা ঢিলা হয়ে গেলে মন খারপ হয়ে যায়, ডিমোরালাইজড হয়ে যায়, কাজে গতি কমে যায়।

এখন না হয় আমরা সরকারে আছি, এ জন্য সুযোগ বেশি। তার পরও বিভিন্ন সংকট কিন্তু রয়েছে। বিরোধী দলের গর্জন-হুঙ্কার আছে, যদিও তারা সফল হতে পারে না। তারপরও এগুলো আমাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়। বসে আমরা থাকতে পারি না।

এই যে উপজেলা নির্বাচন গেল এখানে এক বছর, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সেখানে এক বছর, তার আগে পৌরসভা গেল। এগুলো করতেই তো গেল আড়াই বছর। এগুলো তো অ্যাভয়েড করা যাবে না। এরপর এসএসসি পরীক্ষা, এইচএসসি পরীক্ষা, ঈদ, পূজা বিভিন্ন উৎসব কোনোটাই তো বাদ দেওয়ার উপায় নেই। এ রকম কিছু ছোটখাটো সমস্যার কারণে সম্মেলনের দেরি হয়। একটা সম্মেলন করতে অনেক কিছু লাগে। সবাই চায় সম্মেলনটা একটু ভালোভাবে হোক। আবার অনেকেই চায়, আরো কিছুদিন নেতৃত্ব দিই। এগুলোও নেই, এটা অস্বীকার করা যাবে না। এগুলো নিয়েই তো চলতে হয়।

এনটিভি অনলাইন : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

বাহাউদ্দিন নাছিম : আপনাকেও ধন্যবাদ।