মালয়েশিয়া চায় সিন্ডিকেট, বাংলাদেশ চায় না

Looks like you've blocked notifications!

জনশক্তি রপ্তানিতে মালয়েশিয়া সিন্ডিকেশন চাইলেও চায় না বাংলাদেশ। এ বাজারটি নিয়ে সংশয় কাটছে না, বরং রাঘববোয়ালদের থাবায় উন্মুক্ত বাজারটি বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

মালয়েশিয়া সরকার গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারককে (এমওইউ) বাইপাস করে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেশন চায়। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান ১৪ জানুয়ারি এক চিঠিতে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদকে ২৫টি বাংলাদেশি রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির (বিআরএ) মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে গত ১৮ জানুয়ারি সারাভানানের চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। চিঠিতে মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি আবারও বলতে চাই যে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রাসঙ্গিক সনদ অনুযায়ী, বাংলাদেশ সবসময় স্বচ্ছ, ন্যায্য ও নিরাপদ অভিবাসনের পক্ষে। আমাদের প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ সব বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য সুযোগ উন্মুক্ত রেখে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করেছে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, তারা মালয়েশীয় জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং যেকোনো ধরনের সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা উন্মুক্ত বজায় রাখার জন্য সারাভানানের চিঠির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। তিনি বলেন, সমঝোতা স্মারকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার কথা বলা হয়েছে। বিধান অনুযায়ী, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত তালিকা থেকে অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিআরএ নির্বাচন করবে এবং মালয়েশিয়া সরকার কোটা নির্বাচন ও বণ্টনে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে।’

এ বিষয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলেছেন, এমন হলে দুই দেশের ভাবমূর্তিতে সংকট দেখা দেবে। তাঁরা বলছেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা সত্ত্বেও কিছু কর্মকর্তা ও কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকেরা ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্টদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন।

বেশ কিছু রিক্রুটিং এজেন্ট বলেছেন—নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া তাদের রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায়।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার এক হাজারেরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নেপালের ৮৮৪টি রয়েছে। উভয় দেশের জন্য নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো অগ্রাধিকার তালিকা নেই। বাংলাদেশে একটি ছোট গ্রুপের রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার পীড়াপীড়ি রহস্যজনক, যা শুধু মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রভাবশালী অংশকে লাভবান করার জন্য পুরো প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়।

২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ১০টি রিক্রুটিং ফার্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল বিপর্যয়মূলক। সিন্ডিকেশনের যেকোনো পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশ সরকার এবং দেশের অর্থনীতির জন্য হবে দ্বিগুণ আঘাত।

যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় দুই হাজার বৈধ জনশক্তি রপ্তানিকারক রয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২৫ জনকে ব্যবসার জন্য অনুমতি দেওয়া শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং অভিবাসন-সম্পর্কিত খরচ বাড়াবে।

জনশক্তি বিশেষজ্ঞ ও অধিকার কর্মীরাও সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) সরকারকে কোনো সিন্ডিকেশনের অনুমতি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজার অনুপস্থিত হলে অভিবাসন ব্যয় বাড়বে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় থাকা সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হলে বাজার আবারও হারিয়ে যেতে পারে।

বায়রার সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, বায়রার সব সদস্যের কর্মী পাঠানোর সুযোগ থাকতে হবে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। আর, উন্মুক্ত বাজারে কোনো সিন্ডিকেট গঠন করা উচিত নয়।

সম্প্রতি চুক্তিটি হওয়ার আগেই প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছিলেন, এবার কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। সব খাতেই কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। পরে চুক্তিতে এমন সিদ্ধান্তে একমত হয় দেশদুটি।