করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি

মাস্ক নিয়ে চালক-হেলপারের গড়িমসি, যাত্রীরাও উদাসীন

Looks like you've blocked notifications!
অধিকাংশ বাসের চালকের সহকারীই যথাযথভাবে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। ছবিটি আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে তোলা। ছবি : এনটিভি

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সরকার যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। এতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি যাত্রীও অর্ধেক পরিবহন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কতটুকু মানা হচ্ছে এই নির্দেশনা?  

দেখা গেছে, যাত্রী যখন বাসে ওঠছেন, তখন চালকের সহকারী অর্থাৎ হেলপারের গা ঘেঁষেই ওঠছেন। অথচ, বেশিরভাগ বাসের হেলপারের মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক নেই চালকের মুখেও। বাসের ভেতরেও দেখা গেছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। তবে বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৬০ ভাগ অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যদিও সব বাসেই নিয়ম মেনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এই ৪৫ মিনিট সময়ের মধ্যে কারওয়ান বাজার থেকে মিরপুর ও উত্তরার দিকে যাওয়া অন্তত ৫০টি বাস পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই ৫০টি বাসের মধ্যে মাত্র আটটি বাসের হেলপারের মুখে সঠিকভাবে মাস্ক লাগানো ছিল। বাকি ৪২ জন হেলপারের মাস্ক ছিল থুতনির নিচে।

হেলপারের মতো একই অবস্থা চালকেরও। এসব বাসের বেশিরভাগ চালকের মুখেও মাস্ক পরা ছিল না। যদিও সব চালক ও হেলপারের থুতনির নীচে মাস্ক ছিল। তবে থুতনির নিচে কতজন চালকের মাস্ক ছিল, তা গণনা করা সম্ভব হয়নি।

আয়াত পরিবহনের হেলপার মামুন হোসেন। তাঁর মাস্ক ছিল থুতনির নিচে। জানতে চাইলে বললেন, ‘মাস্ক পরলে কষ্ট হয়। তাও পরি। এখন খুলে রাখছি।’

সাইনবোর্ড-শনিরআখড়া হয়ে গাবতলীগামী আট নম্বর বাসের হেলপার রাসেল। তিনি বলেন, ‘সারা দিন মাস্ক পরতে ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে পরি, আবার খুলি। যখন যাত্রীরা ওঠে তখন পরি। যখন বাস চলতে শুরু করে তখন আবার খুলে ফেলি।’

মিরপুর-১২ থেকে মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী পথের খাজাবাবা পরিবহনের বাসের চালক আবদুল হামিদ। মাস্ক না থাকা অবস্থায় তিনি বলেন, ‘আমি তো একপাশে বসে থাকি। খুব একটা সমস্যা হয় না। তারপরও মাস্ক পরি। মাঝেমধ্যে মনে থাকে না।’

২০টি বাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বাসের সিটে বসা বেশিরভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক পরা ছিল। তবে ভিন্ন দৃশ্যও ছিল। যেমন গাজীপুরগামী বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের নিচতলায় যাত্রী ছিল ১০ জন। এই ১০ জনের মধ্যে ছয়জনের মুখে যথাযথভাবে মাস্ক পরা ছিল না। বাকি চারজনের মুখে মাস্ক ছিল। এদের মধ্যে মাস্ক থুতনির নিচে থাকা ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘গরম লাগছে, তাই নিচে নামিয়ে রাখছি।’

গাবতলীগামী আট নম্বর বাসে মোট যাত্রী ছিল ১৫ জন। এদের মধ্যে আটজনের মুখে মাস্ক ছিল না। মাস্ক কেন নেই জানতে চাইলে শাহেদ আলী বলেন, ‘এক সিটে একা বসেছি। সেজন্য খুলে রেখেছি। বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই মাস্ক পরে ফেরব।’

তবে আয়াত পরিবহন, খাজাবাবা, শিকড়, তানজিল, স্বাধীন, লাভলী ও বিআরটিসিসহ কয়েকটি পরিবহনের বাসের ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, অধিকাংশ যাত্রীর মুখে যথাযথভাবে মাস্ক রয়েছে। সংখ্যাটা কখনও এক-তৃতীয়াংশ, কখনোবা তার চেয়েও বেশি। তবে, এসব বাসের হেলপারের মুখে মাস্ক ছিল না।

এদিকে প্রতিটি বাসেই যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার  নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। গোলাম রসূল (৪৪) নামে এক ব্যক্তি দুপুরে মিরপুর-১ থেকে কারওয়ান বাজারে নিজের অফিসে আসেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বাসের জন্য তাঁকে দীর্ঘক্ষণ মিরপুর-১ নম্বরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। শেষে তানজিল পরিবহনের একটি বাসে তিনি উঠতে পারেন। সেই বাসের প্রায় সব সিটেই একজন করে যাত্রী ছিলেন। তিনি নিয়ম ভেঙে অন্য একজনের সঙ্গে শেয়ার করে এসেছেন।

‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। অফিসেও আসতে হবে, তাড়া ছিল। তাই নিয়ম ভেঙেই আসতে হলো। কিন্তু ১৫ টাকার ভাড়া ২৫ টাকাই দিতে হয়েছে। আগে যেটা ১০ টাকা ছিল এখন সেটা ১৫-১৭ টাকা নিচ্ছে’, যোগ করেন গোলাম রসূল।

মিরপুর-১২ গামী বিকল্প পরিবহনে মতিঝিল থেকে ফার্মগেটে এসে নেমেছেন আবদুস সবুর (৩৫)। বাসটি যখন ফার্মগেটে এসে থামে তখন আশপাশ থেকে অনেক যাত্রী এসে ভীড় করেন বাসের গেইটে। কিন্তু চালক তাদের কাউকেই তুলতে চাচ্ছিলেন না। চিৎকার করে বলছিলেন, ‘বাসে সিট নাই। কেউ উঠবেন না।’ তারপরই দু-একজন জোর করে সেই বাসে উঠে যান। বাকিরা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন।       

আবদুস সবুর বলেন, ‘সবকিছুই তো আগের মতোই চলছে। অফিস-আদালত সব আগের মতো চলছে। মানুষ কাজের জন্য বাইরে বের হচ্ছে। ঢাকায় তো এমনিতেই পরিবহন সঙ্কট। এর মধ্যে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে পরিবহন চলতে বলেছে। কিন্তু যাত্রী আগের মতোই আছে। ফলে অনেক যাত্রী বাসে উঠতে পারছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।’