মিষ্টি আলুতেই ভাগ্য ফিরছে ভৈরবের চরাঞ্চলের কৃষকদের
অল্প খরচ ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চরাঞ্চলের কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে মিষ্টি আলু আবাদে। ফলে মেঘনার বুক চিরে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই মিষ্টি আলুর চাষ। চরের বালুমাটির জমি বছরের ছয় মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য ফসলও ভালো না হওয়ায় এক সময় পতিত পড়ে থাকত। কিন্তু বর্তমানে ওইসব এলাকার কৃষক মিষ্টি আলু চাষ করে মুনাফা ঘরে তুলতে পারায় বেশ খুশি। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মিষ্টি আলুর আবাদ।
মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চল ভৈরবের আগানগরের লুন্দিয়াচর ও টুকচানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে মিষ্টি আলুর আবাদ হচ্ছে। আর উৎপাদিত আলুর বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে আলুর চাষাবাদ।
স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত বছর যেখানে ৫০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করা হয়েছিল। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ হেক্টরে।
কৃষকরা জানায়, এসব চরের জমি বালুমাটি হওয়ায় আগে এগুলোতে কোনো কিছুই চাষ হতো না। কিন্তু মিষ্টি আলু চাষে লাভবান হওয়ায় তাদের ধারণা পাল্টে যায়। তাই এ আলু চাষে তারা আগ্রহী হয়ে উঠেন। বছরের একটি মাত্র ফসল মিষ্টি আলু চাষ করে অনেকই স্বচ্ছল হচ্ছে।
চাষি হোসেন আলী, জাহাঙ্গীর মিয়া ও হাজী কুদ্দুছ ভূঁইয়া জানান, প্রতি বিঘা মিষ্টি আলু চাষে তাদের খরচ পড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা। উৎপাদিত আলু বিক্রি করা যায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। ফলে খরচ বাদে প্রতি বিঘায় তাদের মুনাফা দাঁড়ায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা। এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি আলু খেতে অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে মিষ্টি আলুর ব্যবসায়ী রতন মিয়া, জলিল শেখ ও আকবর আলী জানান, তারা এখানকার মিষ্টি আলুর জমি এবং জমি থেকে উঠানো আলু পাইকারি ধরে কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে থাকে। এই এলাকার উৎপাদিত মিষ্টি আলুর দেশব্যাপী চাহিদা থাকায় তারাও বেশ লাভবান হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম শরীফ খান বলেন, ‘ভৈরবের মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা বা নদীর তীরবর্তী জমিগুলো মাটি মিষ্টি আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অল্প খরচ ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এখানে মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে।’
ওই কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, তাঁর তত্ত্বাবধানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শে এখানকার কৃষকরা মিষ্টি আলু চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। ফলে প্রতি বছরেই বাড়ছে আবাদের পরিমাণ।